বাংলাদেশে লাক্ষা সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল বিবেচিত। কিন্তু দাম না পাওয়া এবং আরও নানা কারণে দিন দিন কমছে লাক্ষা চাষির সংখ্যা। এছাড়া চাষের আওতায় থাকা এলাকার সংখ্যা সংকুচিত হয়ে আসছে। ডঃ মোঃ মোখলেসুর রহমান লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার মতে, লাক্ষা চাষ এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের দু একটি এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন কিছু কৃষক লাক্ষা চাষ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তারা দাম ঠিক মত পান না, তাই তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন।
তবে সম্প্রতি দাম কিছুটা বেড়েছে, এতে কেউ কেউ আবার আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে তিনি আশাবাদী।
এ কর্মকর্তা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক জায়গায় লাক্ষা চাষ হতো।
কিন্তু বর্তমানে এটি নাচোল উপজেলার কয়েকটি গ্রাম অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
নাচোলের একজন লাক্ষা চাষি জানান কিছু চাষিসহ তারা এখনো চেষ্টা করছেন।
তিনি ব্যাক্তিগতভাবে লাক্ষা সরবরাহ করছেন বগুড়ায় চাঁচ তৈরির কারখানা এবং বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে।
লাক্ষা বলতে আসলে কী বোঝায়ঃ
এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা লাক্ষা। এর ত্বকের নিচে ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়।
এটি ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়।
তারপর পোষক গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।
এই আবরণই লাক্ষা বা লাহা নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে ঐ শক্ত আবরণ ছাড়িয়ে ও শোধন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
দু ধরনের লাক্ষা পোকা দেখা যায়।
মূলত বড়ই, পলাশ, বাবলা এ ধরনের গাছকে পোষক গাছ হিসেবে গ্রহণ করে।
সাধারণত বছরে দু বার ফসল উৎপাদন হয়।
এর নির্ধারিত সময় পর গাছের ডালে লাক্ষা পোকা আটকে দেয়া হয়।
রোদ পেলে কয়েকদিনের মধ্যেই পোকা ডালে বসে যায়।
চার সপ্তাহ পর ডালগুলো ঢেকে যায় সাদা তুলার মতো আবরণে।
পরে ঝাঁক বেধে পোকা বের হয়।
পোকার আকৃতি অনেকটা উকুনের মতো এবং এগুলা খুব ঘন ঘন হয়ে বসে।
এক বর্গ সেমিতে অন্তত একশ পোকা থাকতে পারে।
একটা পোকা গড়ে চারশো ডিম দেয়।
কিভাবে প্রসেস করা হয়ঃ
গাছের ডালে লাক্ষা নি:সৃত রস শক্ত হলে নির্দিষ্ট সময় পর সেই বাকল বা কাঁচা লাক্ষা তুলে নেয়া হয়।
পরে ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে হয়।
শুকিয়ে গেলে এক ধরণের আঠা মিশিয়ে আগুনে তাপ দিতে হয়, একটি থান কাপড়ে মুড়িয়ে।
তাপের কারণে মূল ছাড়ানো লাক্ষা রয়ে যায়।
কখনো দানা আকারে বা কখনো ছাড়ানো লাক্ষা টুকরো করে বিক্রি করা হয়।
১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজির দাম।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে আম চাষ কম হয়।
সেখানে এখন লাক্ষা চাষ করছেন অনেকে।
তার মতে, বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর প্রায় দশ হাজার টন লাক্ষার দরকার হয়।
এর বিপরীতে উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ দুশো টন।
লাক্ষার ব্যবহারঃ
আসবাব পত্রের বার্নিশ ও স্বর্ণের ফাঁপা অংশ পূরণ করে।
ঔষধের ক্যাপসুলের কোটিং, চকলেট ও চুইংগামের কোটিং করা হয়।ডা
কঘরের চিঠি বা পার্সেল সিলমোহরের কাজ করা হয়।
অস্ত্র ও রেল কারখানার কাজে এবং পুতুল, খেলনা ও টিস্যু পেপার তৈরির কাজে।