Thursday, 28 March, 2024

সর্বাধিক পঠিত

দ্য সুন্নাহ ডায়েট: এক্সিলেন্স অব রমাদান


রামাদানকে হার্ট ব্লক ও কিডনি ড্যামেজের মাস না বানাই। বছরের সবোর্ত্তম মাস এসে গেছে, রমাদান। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা বুঝি আর না বুঝি, এই মাস আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত আর শিফা, আমাদের জন্য। যদি সুন্নাহ মানা হয়।
রমাদানের মূল কনসেপ্ট এর দিকে তাকালেই দেখবেন, এর ভিতরে মানুষের জাগতিক তিনটি ‘প্রবল চাহিদা’ কন্ট্রোল করার একটা প্র্যাকটিস করানো হয় , আমাদের দিয়ে। এই তিন চাহিদার স্বল্প পরিমান দরকার থাকলেও মানুষ অতিরিক্ত করে নিজেকে শেষ করে দেয়, কাজেই এই তিন চাহিদার একটা লিমিট করার জন্যই যেন রমাদান।
চাহিদা তিনটি হল : অতিরিক্ত ‘খাদ্যগ্রহণেচ্ছা, বৈধ যৌ_তা, ঘুমানো’। স্বাভাবিকভাবে খাওয়া, বৈধ যৌ_তা, ঘুমানো জায়েজ হলেও আমাদের প্রবণতা হল আমরা এগুলো বেশী বেশী করতে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দি। শুধু দেহকে নয়, রূহ কেও।

আরো পড়ুন
করলার লাভজনক চাষ পদ্ধতি
লাভজনক করলা চাষ

করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে Read more

বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ

বাগদা চিংড়ির (ব্ল্যাক টাইগার) চেয়ে ভেনামির উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। তারপরও বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ ? Read more

কাজেই রুহ এবং দেহকে বাঁচাতে হলে এই তিনটি বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রশিক্ষণই রমাদান। সেই প্রশিক্ষণ হবে কোন উপায়ে? সুন্নাহ উপায়ে , রাইট?

শুধু খাদ্য গ্রহণ নিয়ে আজকের সিরিজ সীমাবদ্ধ রাখবো।

রসূল(স) ইফতার করতেন কি দিয়ে ? বা সাহূর?

তৎকালীন যুগে এভেইল্যাবল হালাল এবং উত্তম খাদ্য গুলো দিয়ে। রসূলের ইফতারীর তালিকায় ছিল :
ক. খেজুর
খ. পানি
(সাধারণভাবে এ দুটো কমন, অন্যগুলো কখনও কখনও, বা মাঝে মাঝে, ফ্রিকুয়েন্সী জানা নেই। )

এছাড়াও রসূল/সাহাবী(রা) নিম্নের যেকোন একটি হয়তো খেতে পারতেন:
গ. সাউইক ( গম এবং বার্লিংর মিক্সচার , আমাদের রুটি ইক্যুইভ্যালেন্ট হতে পারে )

ঘ. থারীদ ( মাংস + রুটি )

ঙ. তালবীনা ( আটা+রুটি+মধু )

চ. দুধ,

ছ. তৎকালীন শাকসবজি- অলিভ অয়েল -রোস্টেড মাংস-চীজ -সূপ এসব এভেইল্যাবল খাদ্য।

সেহরীতে স্পেশালি ‘থারীদ এবং খেজুর’ পেয়েছি। তবে এসব খাদ্যই ঘোরাঘুরি করবে, অন্য কিছু হবার নয়। কারণ এভেইল্যাবল ছিলনা।

বাই দ্য ওয়ে, রসূল(স) সব একসাথে খেতেন না, যে কোন একটা বা দুটো এক সাথে। একেক দিন একেকটা হবে।
========

এখন চিন্তা করেন, আমরা কি খাই?

আমরা খাই, তেলে ভাজা বুট – মুরি, পেঁয়াজু , বেগুনী, আলুর চপ, টিকা-শামী-শিক কাবাব, সেই সাথে হরেক রকম কাবাব , হালীম, জিলাপী : এসব খাবার।

কোথায় পেলাম আমরা এসব খাদ্য? আসতাগফিরুল্লাহ

এগুলোর সবচে বড় অসুবিধা হল, এগুলো পোড়া তেলে ভাজা হয়। কাজেই এতে স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্সফ্যাট মাত্রাতিরিক্ত থাকে। সুতরাং রমাদান মাসেই প্রতি বছর আমাদের বুকে ২-৩% ব্লক বেড়ে যায়।

যদি বাসাতেও ভাজা হয়, তারপরও এসবে মাত্রাতিরিক্ত তেল থাকে, যা বুকে কিছু না কিছু ব্লক করেই।

তার উপর এসব ভারী খাদ্য খেয়ে আমরা আর নড়তে পারিনা, ইফতারের পরেই পেটে ঠুসঠাস শুরু হয়ে যায়। হজম করতে এত কষ্ট হয়, মাঝে মাঝেই পেটে সমস্যাও হয়। ভারী খাদ্য খেয়ে সটান হয়ে পড়ে যেতে হয়, তারাবীহ পড়ার এনার্জি পাইনা।

আর তারাবীহ তে অযুও রাখতে পারিনা। ফলাফল: রকেট তারাবীহ ….,

রাতে ঘুমাতে ও হয় বেশী, কারণ তেল হজম করতে পেট টার খুব কষ্ট হয়, বেশী রেস্টের দরকার হয়, কাজেই ফজরের পর বেশী ঘুমাতে হয়।

সুতরাং পুরো রমাদান টাই কিন্তু আমরা আসলে ঠিক মতন ইবাদত বন্দেগী করতেই পারিনা। খালি রান্না আর খাওয়ার মধ্যে দিয়েই শেষ হয়।

অথচ উদ্দেশ্য ছিল, একটু লাইট খেয়ে ইবাদত বন্দেগীর প্র্যাকটিস করবো, একটু কম ঘুমাবো, দ্বীনের উপর একটা কনসেন্ট্রেশন আসবে।

আর সুখাদ্যের কথা বিবেচনায়, কিন্তু ইফতারীর সময় শর্করা জাতীয় খাদ্য বেশী থাকা উচিত। অথচ আমরা কিন্তু বুট-পেয়াজু-বেগুনী-কাবাব-হালীম তে এমফ্যাসিস করছি, এটা কিন্তু তেল এবং আমিষ জাতীয় খাবার।

যেখানে মূলত: শর্করা র সাথে হালকা আমিষ দরকার ছিল, সেখানে আমরা খাচ্ছি, বিষাক্ত তেল আর আমিষ? বিষাক্ত তেল খেয়ে বুকে ব্লক হচ্ছে, আর অতিরিক্ত আমিষ খেয়ে কিডনী নষ্ট হচ্ছে। সুন্নাতের খেলাফ করার উপরি পাওনা এগুলো। আল্লাহ আমাদের শীফা দান করুন।

যেখানে রমাদানে হালকা খেয়ে শরীর টাকে হালকা করে ফেলার কথা ছিল, সেখানে রমাদানেই আমরা ৩-৪ কেজি ওয়েট গেইন করছি। এই ৩-৪ কেজি চর্বি যে জমলো, এটা কি হজমের অপচয় নয়? হজম করতে যে সময় লেগেছে, তার কারণে যে ইবাদতগুলো নষ্ট হয়েছে, সেটা কি আমাদের বিশাল লস নয়? তার উপর বুকে ব্লক আর কিডনী ড্যামেজ তো উপরি পাওনা হয়েছে ।

কিজন্য আল্লাহ রমাদান দিলেন, আর আমরা কি বানালাম? আসতাগফিরুল্লাহ।
==========

প্রায় ৬ বছর দেশের বাহিরে আরব-আফ্রিকান-মালয়দের সাথে ইফতারী করলাম, কোনদিন বুট-পেয়াজু-বেগুনী এইসব ভাজা-পোড়া খাবার দেখলাম না। নরমাল রাইস-রুটি-সবজি- মাংস-খেজুর- এইসব খায় সবাই।

========

আসুন, আমাদের খাদ্য গ্রহণটা রসূল(স) এর মতন করি। রমাদানকে বুকে ব্লক হবার মাস না বানাই, কিডনী ড্যামেজের মাস না বানাই। রমাদান মাস হোক ইবাদতের, মনোযোগের, ভুড়ি কমানোর, সুস্বাস্থ্যের। দেহেরও কল্যান , রূহেরও কল্যান করি।

দেশে এভেইল্যাবল খাদ্য থেকে একটি রমাদান ডায়েট দিলাম। পছন্দ হলে মেইন্টেইন করতে পারেন।

========

সুষম ইফতারী কি হতে পারে:

ক. খেজুর, পানি, ভাত/রুটি প্রতিদিন থাকবে। সাথে হালকা মধু হতে পারে।
খ. ভাত/রুটির সাথে থাকবে শাকসবজি+ মুরগী-হাঁস-কবুতর এর মাংস বা মাছ। একটা-দুটো ডিম থাকতে পারে। সিদ্ধ হলে ভাল, ভাজি হলে কম ভাল, কারণ তেল খাচ্ছেন এক্সট্রা। মাংস বা মাছ : ২-৩ পিছ, মাঝারী, প্রতি বেলায়। তার বেশী নয়। তরকারীতে তেল দিতে হবে কম।
এটা সাধারণ খাদ্যএর রুটিন।
গ. মাঝে মাঝে যুক্ত হবে কোন একটি ফল, যদি ফরমালীন মুক্ত পান। শশা- গাজর এর সালাদ থাকলে মন্দ না।
ঘ. মাঝে মাঝে থাকবে দুধ।
ঙ. সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস। এর বেশী নয়। গরুর চর্বি খাওয়া যাবেনা। জাস্ট পিউর মাংসের টুকরা খেতে হবে। দুই বেলায় সর্বমোট ৮-১০ টুকরা গরুর মাংস খাবার যাবে, ৩৫০ গ্রাম। এর বেশী নয়। তরকারীতে তেল কম দিতে হবে।
চ. চিনির শরবত-মিষ্টি-জিলাপী এসবের দরকার নাই। তবে যদি না খেয়ে থাকতেই না পারেন, তবে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন দিনে সবোর্চ্চ 6 চামচ ( ছোট চামচে, ২৫ গ্রাম ) খাবার অনুমতি দিছে। তাই মাত্র এক গ্লাস, তাও হালকা মিস্টি হবে। তবে এটা কিন্তু সুন্নাত না, খেয়াল করবেন। খেলাফ।

কেমন হওয়া উচিত রমজানে সেহরী:

ক. খেজুর, পানি
খ. ভাত/রুটির সাথে শাকসবজি-মাংস এসব থাকতে পারে।

চা বা কফি, ইফতারী বা সেহেরীতে, যখন খুশী খান, তবে মাত্র ১ চামচ চিনি দিবেন, তার বেশী নয়।

সেহেরীর পরে সমানে ৩ লিটার পানি খাবার দরকার নেই। নরমাল ১-২-৩ গ্লাস পানি খেলেই হল। মাত্রাতিরিক্ত বেশী পানি খেলে কিন্তু কিডনীর ক্ষতি হয়। যতই খান, পরের দিন যোহরের পরেই সব শেষ হয়ে যায়। লাভ নাই , । তৃষ্ঞা র কষ্ট করতে এত নিরুৎসাহ কেন আমাদের?
ইফতারী থেকে সেহেরী মিলিয়ে দেড় থেকে তিন লিটার পানি খাবেন, এর বেশী না, কমও না।
=====

ফার্মের মুরগী ভাল না, দেশী ভাল। হাঁস-কবুতর বিকল্প অপশন হতে পারে।

ফার্মের মুরগীর ডিম কেমন? হাঁসের ডিম একটা ভাল অপশন হতে পারে।
====

খাবার সূত্র একটাই, পেট পুরো ভরে খাবেন না, পেট হালকা ভরা আছে, এমন অবস্থায় পানি খেয়ে উঠে যাবেন। পরে দেখবেন, পুরোই ভরা।

তাহলে ইবাদত বন্দেগী করতে পারবেন, রূহ টা শক্তি পাবে। পেট তেল দিয়ে ভরে ফেললে দেহটা পড়ে যায়, ঘুম আসে, রূহ টা চাইলেও পারেনা।

ভরপেট থাকলে রূহ শক্তি পায় না, শয়তান কাবু করে ফেলে। ক্ষুধা হল ইবাদতের শক্তি। ক্ষুধা হল রূহ এর শক্তি। মনে রাখবেন।
====

ইফতার এবং সেহেরীর মাঝখানে আর কোন বড় খানা হবেনা। রাতে শোবার সময় সবোর্চ্চ ২-৩ টা খেজুর হতে পারে, যদি ক্ষুধা লাগেই।
===
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: রসূল(স) কিন্তু হোল গ্রেইন খেতেন। মানে লাল আটা বা লাল যব , বা লাল ভাত। আমাদের মতন সাদা ভাত বা আটা না, যেটা হাফ গ্রেইন।

কাজেই যদি লাল ভাত বা লাল রুটি খেতে পারেন, তাহলে কিন্তু ষোল আনা সুন্নাহ পালন হয়। লাল ভাতের/আটার পরিপূর্ণ পুষ্টিও পাবেন। ভিটামিন ডাইরেক্ট পেয়ে গেলেন, পরে আর অসুস্থ হয়ে ইনশাআল্লাহ কিনে খেতে হবেনা।

( সরোবর এর মতন প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু তালবীনা বানায়, সেটা কিনে খেতে পারেন, ভাত-মাংসের বদলায়, কোন কোন দিন। তাহলে ১০০% সুন্নাহ পালন হল।
গায়ের স্বাদ দিচ্ছে লাল ভাত, সেখান থেকে লাল ভাত কিনতে পারেন, যদি চান। )

======

ইফতারী টা যখন এসব সহজ খাবার দিয়ে করবেন, দেখবেন, এশার পরে শক্তি পাচ্ছেন, আর রকেট তারাবী লাগবেনা, ধীরে সুস্থে তারাবীহ পড়ে এমন জায়গা খুজে সেখানে যেতে পারবেন।

ক. পেটে সমস্যা হবেনা।
খ. ইবাদত করার শক্তি পাবেন ।
গ. রাতে ঘুম নরমাল বা কম হবে, মাঝে মাঝৈ তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন।
ঘ. রমজান শেষে দেখবেন, যে ভুড়ি হয়তো ২-৩-৪ কেজি কমে গেছে, আলহামদুলিল্লাহ। রূহানী শক্তি পাবেন। সত্যিকারের রমাদানের উদ্দেশ্য অর্জিত হবে।
কত সুবিধা
ঙ. বুকে ব্লক বাড়বেনা, বরং কমবে, ইনশাআল্লাহ।
চ. কিডনী ড্যামেজ হবেনা, সেইফ থাকবে। আলহামদুলিল্লাহ।

======
আর একটা কথা না বললেই নয়। সেটা হল, রমাদানে আমরা আমাদের মা-বোনদের উপর একটা অযথা অত্যাচার করি। ইফতারীর আগে যখন তারা ক্লান্ত, তখন বুট-পেয়াজু-বেগুনী ভাজা। অযথা। ওই সময় কারো মুড থাকে, কাজ করার বলেন?

এইসব ভাজা পোড়া করে তারা ক্লান্ত হয়ে যায়, পরে ইবাদত করতে পারেনা। কত বড় জুলুম চিন্তা করেন। মানুষকে ইবাদত করতে না দেয়া। নিজেও তেল খেয়ে ঢোল হয়ে ইবাদত করতে না পারা।

২-৩-৪ দিনে একবার রানলেই তো হয়, তাহলে ইবাদত করার সময় পাওয়া যায়। মাংস – মাছ তো ফ্রিজেই থাকে। ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে খেলেই হল।

গরম করার জন্য মাইক্রোওয়েভ ইউজ করতে পারেন। তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যাবে, কষ্ট হবে কম।

এবাবে কিন্তু আমরা নিজেদের এবং মা-বোনদের জন্যও ইবাদতের সময় বের করতে পারি।
এক সময় কিছুই থাকবেনা, থাকবে শুধু আমাদের আমল গুলো।
=======

রমজান মাস আর না হোক বুট-পেয়াজু-বেগুনী-কাবাব এর মাস, না হোক ‘বুকে ব্লক হবার মাস’, না হোক ‘কিডনী ড্যামেজের মাস……’

বরং রমজান মাস হোক, রহমতের মাস, বরকতের মাস, রসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী খাবার মাস। রসূল(স) এর সুন্নাহ মেইন্টেইন করে খাবো, রসূল(স) এর দেখানো ইবাদতও ইনশাআল্লাহ করতে পারবো।

যারা রসূল(স) এর সুন্নাহ অনুযায়ী খেতে পারবে, তাদের যেন আল্লাহ রসূল(স) এর সাথেই রাখেন, জান্নাতে। এই দোয়া রইলো। আমীন।
====

দ্য সুন্নাহ ডায়েট: এক্সিলেন্স অব রমাদান
– এম. রেজাউল করিম ভূঁইয়া

0 comments on “দ্য সুন্নাহ ডায়েট: এক্সিলেন্স অব রমাদান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *