Sunday, 05 May, 2024

সর্বাধিক পঠিত

কুষ্টিয়ায় সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ চাষে সফলতা


কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম খোকন। প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ চাষ করেন তিনি। প্রথমবারেই সাম্মাম চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন।

করোনায় বাড়িতে বসে অলস সময় পার না করে কিভাবে সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় মূলত সেই চিন্তা থেকেই খোকনের বিদেশি ফল সাম্মাম চাষের পরিকল্পনা মাথায় আসে। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে ও কৃষি অফিসের পরামর্শে বাণিজ্যিকভাবে চাষ সাম্মাম চাষ শুরু করেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাইম প্রথম ৩৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে সাম্মাম চাষ শুরু করেছেন। পুষ্টিগুণে ভরপর বিদেশি এই ফল চাষাবাদ দেশে এখনও তেমন একটা প্রচলিত না। চাষে ঝুঁকি এবং চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রচারণার অভাব রয়েছে।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

নতুন জাতের রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার খেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। কেউ কেউ আগামীতে নতুন জাতের এই রসালো ফল উৎপাদনের জন্য খোকনের কাছ থেকে পরামর্শও নিচ্ছেন।

ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় কুমড়ো গাছের মতো লতানো গাছ। গাছের ফাঁকে ঝুলছে দেশি বাঙ্গীর মতো সাম্মাম নামের এই ফল। প্রায় প্রতিটি গাছই ফলে ভরপুর। বাঁশের বাতা আর পলিথিনের জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো খেত যেনো ফলে ভরে রয়েছে। এই খেতে পরিচর্যা করতে দেখা যায় নাইম ইসলাম খোকনকে।

খোকন জানান, কলেজ বন্ধ, তাই বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম। বিদেশ থেকে ভাই ফোন দিয়ে এই সাম্মাম চাষ করা সম্পর্কে বলেন। আমি ইউটিউব থেকে এটি কিভাবে চাষ করে সেটা জানলাম। পরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বগুড়ার একটি খামার থেকে এ ফলের চারা সংগ্রহ করি। সেই সাথে সেখানে গিয়ে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

খোকন নতুন এ ফল সম্পর্কে বলেন, সাম্মাম ফল খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ। বর্হিবিশ্বে এর ফলের বেশ প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে এটির প্রচলন খুব একটা নেই। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মামসহ বিভিন্ন দেশে রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন ও হানী ডিউ বলা হয়ে থাকে। দুই জাতের এ ফল রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তকে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।

চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, দোআঁশ মাটিতে সাম্মাম চাষ করা ভালো। মাটি ভালোভাবে চাষ করে বেড এবং নালা করে, মালচিং দিয়ে এ ফলের চাষ করতে হয়। তাহলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়। এটি খুবই অল্প সময়ের ফসল। গাছ লাগানোর দেড় মাসের মধ্যেই হয় সাম্মাম ফল।

খোকন বলেন, আমি প্রথমে প্রবাসী বড় ভাইয়ের কথামতো ঝুঁকি নিয়ে এ ফলের চাষ শুরু করেছি। এক বিঘা জমিতে আমার ৩ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ২-৩টি করে ফল রয়েছে। বেশি ফল রাখলে ফলন কম হয়। একেকটি ফলের ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। প্রতিটি গাছেই ফল বেশ ভালো এসেছে। প্রথমবার চাষ করায় এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে এক লাখ টাকার মতো। আগামীতে এর চেয়ে খরচ কম হবে। আশা করছি এ বছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো লাভ হতে পারে।

খোকন জানান, যেহেতু এই ফল কাঁচা-পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়, এজন্য কিটনাশকের পরিবর্তে আমি ফেরামন ফাঁদ ও আগাছা যাতে না হয় এজন্য মালচিং দিয়েছি। সেই সাথে বিষমুক্ত উপায়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছি।

নতুন এই ফল এবং ফলের চাষাবাদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে খোকনের জমিতে আসছে সেই সাথে আগতদের এ ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করছে খোকন।

সাদেকুল নামের এক কৃষক বলেন, আমি এই গাছ লাগানো থেকে শুরু করে এই জমিতে দৈনিক হাজিরা হিসাবে কাজ করছি। এ জমিতে খুব ভালো ফল এসেছে। আর ফলগুলো খেতেও খুব ভালো। আগামীতে নিজের জমিতে আমি এ ফলের চাষ করবো।

এই এলাকার কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, আমরা মনে করেছিলাম এই ছেলে পাগলের মতো কি চাষ করছে। কিন্তু এখন তো দেখছি বেশ ভালো গাছ আর ফল ধরেছে। শুনেছি এটি বিদেশি ফল, খেতেও খুব ভালো। এর আগে এ ফল আমাদের এলাকায় হয়নি। এই ফল প্রতি কেজি ২শ’ টাকা করে বাজারে বিক্রি করা যাবে। যদি লাভ হয়, তাহলে আগামীতে অনেকেই এই ফলের চাষ করবে।

স্থানীয় শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, সৌদি আরবের ফল এখানে চাষ হয়েছে বলে দেখতে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করেছে সেই সাথে নতুন এ ফল দেখে দেখে মন ভরে গেছে।

বিদেশি এ ফল অধিক লাভজনক উল্লেখ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, আধুনিক কৃষি গতানুগতিক কৃষিকাজের চেয়ে লাভজনক। সাম্মাম বিদেশি ফল তবে আমাদের এখানেও চাষ করা সম্ভব। নাইম নামের তরুণ কৃষককে আমরা চাষে পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। খোকন বিষমুক্ত আধুনিক উপায়ে চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। আগামীতে এ চাষ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করেন তিনি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, রক মেলন বা সাম্মাম বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে এটির চাষ করা সম্ভব। মিরপুর উপজেলার কচুবাড়ীয়া এলাকার একজন তরুণ এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এ বছর এ ফলের চাষ করেছে। সে খুব ভালো ফলও পাচ্ছে।

0 comments on “কুষ্টিয়ায় সৌদি ফল ‘সাম্মাম’ চাষে সফলতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *