Monday, 29 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

করোনা মহামারীতে সারা দেশে কৃষকের লোকসান ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারও বেশি


করোনায় কৃষকের লোকসান

করোনার কারনে ক্ষতির সম্মুখিন প্রতিটি সেক্টর, কর্মজীবিরা চাকুরিচুত্য, মধ্যম আয়ের মানুষ নেমেছে নিম্ন আয়ে, বেকার হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। কৃষি ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব ভয়ঙ্কর। কৃষি ক্ষেত্রে করোনা মহামারীতে ভয়াল থাবা নিয়ে এক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেছেন ব্র্যাক।

এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার আওতায় করা দুটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে ব্র্যাক।

সারাদেশের ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক (ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী) এর অংশগ্রহনে  কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা দুটি পরিচালিত হয়।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

গবেষণায় দেখা যায়, মহামারী শুরুর দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ৩০%-৩২% এবং ব্যবসায়ীদের এই পণ্যগুলোর বিক্রি ৩০০% বৃদ্ধি পায়। মহামারীর আগেই কৃষক তাদের মজুদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাই কৃষকের কোনা উপকারে আসে নাই।

ত্রাণ-বহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করতে না পারার কারণে ৮৮% কৃষক (মাছ চাষীদের ১০০%) আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। কৃষকদের উল্লেখযোগ্য বিষয় গুলো হলো-ন্যায্যমূল্য না পাওয়া (৬৬%), সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকা (৫২%), উৎপাদনের উপকরণসমূহের উচ্চমূল্য (৪৫%) এবং শ্রমিক সংকট (২৮%)।

পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২,০৭,৯৭৬ টাকা। মোট কৃষকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।

পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ডঃ এম এ সাত্তার মন্ডল এই গবেষণার জন্য ব্র্যাককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সঙ্কট সামাল দিতে আড়তদার, পাইকার, ফড়িয়া এদেরকেও গুরুত্ব দিতে হবে, সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, বাজারে এদের বিরাট ভূমিকা থাকে।

ব্র্যাকের জুম মিটিং এ নিরীক্ষার প্রকাশ
ব্র্যাকের জুম মিটিং এ নিরীক্ষার প্রকাশ

এসিআই এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডঃ এফ এইচ আনসারী বলেন, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাত, ডিলার এবং সম্প্রসারণ সেহাপ্রদাঙ্কারীদের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নতি ঘটাতে সরকারের ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।

প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, দেশের যেসব এলাকায় করোনার আক্রমণ কম, সেসব এলাকায় কৃষকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সহায়তা করতে হবে।

ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, মহামারী শুরুর পর ব্যাপকহারে চাহিদা কমায় চাষীদের সবজি, দুধ নষ্ট হয়েছে, ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব শুভ হবে না। কৃষকেরা কৃষিকাজ ছেড়ে দিলে বা কমিয়ে ফেললে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমুকির মুখে পড়বে।

তথ্যপ্রদানকারী কৃষকদের ৪২% জানিয়েছেন সংকট মোকাবিলার কোনও উপায় তাদের ছিল না। বিশেষত, ৬০% খাদ্যশস্য ও সবজি উৎপাদনকারী কৃষক বলেছেন যে, তাদের সম্পূর্ণ লোকসানই মেনে নিতে হয়েছে। মোট কৃষকের ১১% এবং পোল্ট্রি কৃষকের মধ্যে ১৭% তাদের উৎপাদন কমিয়েছিলেন। উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিলেন ২% কৃষক।

সরকারের কাছ থেকে ৬৬% কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেতে চান। ৫৬% কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম এবং কম খরচে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ চান ৪৮% কৃষক।

সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ৬৪% কৃষক সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে জানেন তবে এই সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ৭৯% কৃষকের কোনও ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে। ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ২০% কৃষকের।

গবেষণার নিরিখে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পদ্ধতিগত বাধাগুলো কমিয়ে ঋণ বিতরণ ব্যবস্থাকে কৃষকবান্ধব করা, সৃজনশীল বিতরণ ব্যবস্থা প্রবর্তন (এমএফএস, এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ)। বীজ, সার, ফিড উৎপাদনকারী, স্টোরেজ, পরিবহন ইত্যাদি খাতগুলোকে সুবিধা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে আরও বিকশিত করা। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা বাড়িয়ে বাজারকে প্রাণবন্ত রাখতে নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা, ক্ষুদ্র কৃষকের কাছাকাছি সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা।  উপখাতভিত্তিক স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি মডেল ব্যবহার, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করা এবং বেসরকারি খাত ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পগুলোকে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একত্রীকরণ।

  • নিরীক্ষা ও গবেষনাটি ব্র্যাক দ্বারা পরিচালিত

0 comments on “করোনা মহামারীতে সারা দেশে কৃষকের লোকসান ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারও বেশি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *