Tuesday, 16 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলায় প্রয়োজন সহনশীল জাত – ডঃ ফা হ আনসারী


ডঃ ফা হ আনসারী, প্রেসিডেন্ট, এ সি আই এগ্রিবিসিনেসস ডিভিশন বলেছেন- বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আরো বাড়বে। অন্যদিকে ভূমিতে লবণাক্ততাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর পরের চিত্র হয়তো আরও ভয়াবহ। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ফসল ফলাতে হবে, পশু-পাখি পালন করতে হবে এবং মাছ চাষ করতে হবে। এসব করার জন্য আমাদের সহনশীল জাত লাগবে

গতকাল ২৪ এপ্রিল রবিবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘বৈরি আবহাওয়ায় কৃষিজ উৎপাদন: অস্থিতিশীল বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাণিজ্য, শীর্ষক সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে এসিআই এগ্রিবিজনেস প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এসব কথা বলেন।। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।

মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডঃ ফা হ আনসারী যোগ করেন যে, এক্ষেত্রে পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। যাতে দ্রুত এসব জাত উৎপাদন করতে পারে এবং মাঠে নিতে পারে। কিন্তু এ সমস্ত কাজের জন্য আরো বড় সরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে যাতে করে প্রাইভেট সেক্টরের গবেষণার ক্যাপাসিটি বাড়বে এবং অনেক দ্রুত সহনশীল জাত গুলো বাজারজাত করতে পারবে।

আরো পড়ুন
ইলিশ দিয়ে প্রথমবারের মত কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন
ইলিশের কৌটাজাতকৃত খাদ্য তৈরি

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এই মাছ স্বাদে অতুলনীয় ও গন্ধের জন্য দেশ ও বিদেশে রয়েছে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এই অতুলনীয় Read more

করলার লাভজনক চাষ পদ্ধতি
লাভজনক করলা চাষ

করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে Read more

‘এখানে কৃষি ও খামার সম্প্রশারনে সরকারি সম্প্রশারন কর্মী ও বেসরকারি সম্প্রশারন কর্মীর অনেক বড় কাজ রয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি অনেক ভালো ভালো জাত ১০ বছরেও যথাযথ ভাবে খামারি পর্যায় পৌঁছাতে অনেক ক্ষেত্রেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। এজন্য আমি মনে করি সরকারি সম্প্রশারন কর্মী ও বেসরকারি ১ লক্ষেরও বেশি সম্প্রশারন কর্মীদের ইন্টিগ্রেটেড ভাবে কাজ করতে হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দ্রুত কৃষকদের কাছে গবেষণার ফলাফল পৌছে দিতে হবে’- যোগ করেন ড. আনসারী।

‘বৈরি আবহাওয়ায় কৃষিজ উৎপাদন অস্থিতিশীল বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাণিজ্য,

তিনি বলেন, পশু খাদ্যে যে সকল কাঁচামাল দরকার হয় আমরা সেগুলো আমদানি করি। আমরা এখনো প্রায় ১ কোটি টনেরও বেশী গ্রেইন আমদানি করি। এখন ধান উৎপাদনে আমরা ৭০% জমি ব্যবহার করি, আমরা যদি ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি, প্রতি হেক্তরে ৮ টন যা এখন ৪ টন, তাহলে যে জমি খালি হবে সেখানে আমরা বাড়তি গম, ভুট্র, রবি শস্য, তেলবীজ ও ঘাস উৎপাদন করতে পারি। এর জন্য অনেক বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমরা এত বছর ধরে অনেক ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদনশীলতার কথা বলে এসেছি এবং আমরা এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছি।

মাননীয় খাদ্যমন্ত্রির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. আনসারী আরো বলেন আমাদের এখন ভ্যালু চেইন নিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ, একদিকে কৃষক উৎপাদন করছে আর অন্যদিকে ভোক্তা তার প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য পণ্য সামগ্রী ক্রয় করছে। ইদানিংকালে দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এবং মানুষ এখন দ্রুত ক্রয় করছে। অনেকক্ষেত্রে যখন মার্কেটে অস্থিরতা তৈরি হয় তখন প্যানিক পারচেজ হচ্ছে। কৃষক এবং ভোক্তার মাঝে অনেক দুরত্ব তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ কমপ্লিট ভ্যালু চেইন এ অনেক বড় গ্যাপ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পোস্ট হারভেস্ট ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে বিশেষ করে স্টোরেজ, ট্রান্সপোর্টেশন এবং প্রসেস। তারপর ওয়েস্টেজ কমানোর জন্য প্রসেস ফুড এ অনেক বড় বিনিয়োগ করতে হবে। খাদ্যের সেলফ লাইফ নিশ্চিত করতে হবে। আর আমরা যা এক মৌসুমে উৎপাদন করি তা মৌসুমে বা পরের মৌসুমে কন্সিউম করি। এখানে হ্যান্ড টু মাউথ এর যে অবস্থাটা আছে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের স্টোরেজ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

আমাদেরকে খাবার প্রসেস করে রেখে দিতে হবে যাতে করে খাবারের এক্সপায়ারি ডেট বৃদ্ধি পায় এবং ওয়েস্টেজ কম হয়। আমি মনে করি এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পিপিপির মাধ্যমে বড় বড় স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ও কোল্ড চেইন ডেভেলপ করতে হবে এবং এইখান থেকে কৃষক ও খামারিরা সার্ভিস পাবে প্রসেস মিলগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে। নতুন নতুন প্রসেস মিল তৈরি করতে হবে। সেখানে ইন্সেন্টিভ এবং লোন দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ফরওয়ার্ড লিংকেজ এর ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয় করলে ভ্যাট দিতে হয় অথচ বাইরের মার্কেটে অনেকেই ভ্যাট দেয় না, যার ফলে আমাদের ফরওয়ার্ড মার্কেট অর্থাৎ মর্ডান ট্রেড গতি পাচ্ছে না। মর্ডান ট্রেড, যেটা বর্তমানে আমাদের টোটাল ট্রেড ২% এরও কম। এটিকে যদি আমরা ডেভেলপ করতে পারি তাহলে কৃষক ও খামারি উৎপাদন করবে, সার্ভিস প্রোভাইডাররা স্টোরেজ ও ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিসেস দিবে, প্রসেসররা প্রসেস করবে এবং ফরওয়ার্ড মার্কেটে পণ্য সহজলভ্য থাকবে। এতে করে ভোক্তা সঠিক দামে পণ্য কিনতে পারবে, কৃষক লাভবান হবে ও বাজারে অস্থিরতা কমবে। যেমন সিঙ্গাপুরে এক ছড়া ধান উৎপাদন না হওয়া সত্বেও কখনো খাদ্য পণ্যের দাম তেমন ওঠানামার তথ্য পাওয়া যায় না এর কারণ হলো স্ট্রং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। আমি মনে করি এখানে আমরা সিঙ্গাপুরের উদাহরণটা সাথে নিতে পারি।

‘বৈরি আবহাওয়ায় কৃষিজ উৎপাদন অস্থিতিশীল বৈশ্বিক কৃষিপণ্যের বাণিজ্য,

‘আমি মনে করি, এতে দেশ ও সমাজের অনেক লাভ হবে। বাংলাদেশের মিডিয়ার পেনেট্রেশন অনেক বেশি এবং কৃষি সমপ্রসারণের জন্য সাংবাদিকদের ও মিডিয়ার অবদানও অনেক। তাদের আরো ট্রেনিং দিতে হবে এবং তাদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। এতে মিস কমিউনিকেশন কম হবে, ফলে কৃষি পণ্যের প্যানিক প্রোডাকশন, প্যানিক সেলিং ও প্যানিক বাইং কম হবে। বাজারে অস্থিরতা কমে যাবে’ -যোগ করেন ড. আনসারী

0 comments on “বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলায় প্রয়োজন সহনশীল জাত – ডঃ ফা হ আনসারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *