Sunday, 05 May, 2024

সর্বাধিক পঠিত

হাবিপ্রবি শিক্ষকের উদ্ভাবিত গ্রেইন ড্রায়ারের সফলতায় কৃষকের মাঝে আলোড়ন


গ্রেইন ড্রায়ার টিম

ক্যাম্পাস প্রতিনিধিঃ দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষকের উদ্ভাবিত  প্রযুক্তি ‘টু স্টেজ গ্রেইন ড্রায়ার’ কৃষকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যা বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা, ধান, গম ইত্যাদি শুকানোর কাজে ব্যবহিত হচ্ছে। উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈরী আবহাওয়াতেও দ্রুত সময়ে সীমিত খরচে ধান, গম, ভূট্টা শুকানো যায়।

২০১৮ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ড্রায়ারটি উদ্ভাবনের গবেষণা কাজ শুরু করেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একদল গবেষক।

এই ড্রায়ার সরকারের ধান, চাল সংগ্রহে একটি কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারবে বলে মত প্রকাশ করেন গ্রেইন ড্রায়ারটি উদ্ভাবনের নেতৃত্বে থাকা গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

গ্রেইন ড্রায়ার টিম
গ্রেইন ড্রায়ার টিম

দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারিভাবে শস্য শুকাতে এ ধরনের একটি ড্রায়ার স্থাপন করা হলে একদিকে কৃষকেরা যেমন উপকৃত হবেন, অন্যদিকে ফসল নষ্টের শঙ্কা হ্রাস পাবে।

২০২০ সালে শস্য সংগ্রহে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হয় ড্রায়ারটিকে। কয়েক সপ্তাহ আগে বাণিজ্যিকভাবে শুরুর পর থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চাতালে শুকানোর খরচেই মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ভুট্টা শুকাতে পারছেন ব্যবসায়ীরা।

একই খরচে আর্দ্রতা ১২-১৪ শতাংশে নিয়ে আনা এবং বৈরী আবহাওয়াতেও শুকানোর সুবিধা থাকায় প্রতিদিন দূর-দূরান্ত  থেকে ভুট্টা –ধান শুকানোর জন্য ছুটে আসছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করে এতো বেশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কর্তৃপক্ষ।

চাহিদার তুলনায় ড্রায়ারের ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায় শত শত বস্তা শুকানোর জন্য সারিবদ্ধভাবে জমা হয়ে পড়ে আছে ড্রায়ারের পাশে এমন চিত্র দেখা মিলছে দিনাজপুরের এলমিস চৌধুরীর রাইস মিলের একটি অংশে।

গ্রেইন ড্রায়ারটি উদ্ভাবনের নেতৃত্বে থাকা গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাত হোসেন সরকার জানান, এই করোনা পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন গড়ে ২৩০ বস্তা (১৪০০০ কেজি) ভুট্টা শুকানো হচ্ছে। এরপরেও কৃষকদের চাহিদা মিটানো যাচ্ছে না। আমাদের দেশে আগে এই ধরনের কোনো প্রযুক্তি ছিল না। আবহাওয়া এবং কৃষকদের কথা বিবেচনা করে গবেষণার মাধ্যমে এই প্রথম এ ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে শস্য শুকানোর কার্যক্রম চলছে এবং ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইলে অসংখ্য কল আসছে। কিন্তু আমাদের একটি মাত্র ড্রায়ার হওয়ায় জমাকৃত ভুট্টা শুকাতেই কৃষকদের চাহিদা মিটানো যাচ্ছে না। তাই ফোন কল পেলেও বাধ্য হয়ে অনেককে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।

ড. সাজ্জাত সরকার আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ এবং বাণিজ্যকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটিকে ত্বরান্বিত করতে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি প্রধান এদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। উদ্ভাবিত এ ড্রায়ারটির মাধ্যমে যেকোনো আবহাওয়াতেই দানা জাতীয় সব ধরনের শস্য শুকানো যায়। ফলে আর্থিকভাবে আগে যে ক্ষতি হতো, সেটি আর হবে না। দেশের প্রতিটি উপজেলায় যদি সরকারিভাবে শস্য শুকানোর জন্য একটি ড্রায়ার স্থাপন করা হয়, তাহলে একদিকে কৃষকেরা যেমন উপকৃত হবেন, অন্যদিকে ফসল নষ্টের শঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।

ইতিপূর্বে ড্রায়ারটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে এর কার্যকারিতা এবং গুনাবলী দেখতে পরিদর্শনে যান হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুল হক (মুক্তিযোদ্ধা), আইআরটি পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: তারিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মারুফ আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।

পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড.মু.আবুল কাসেম বলেছিলেন, এটি একটি নিড বেসড টেকনোলজি। প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে এবং  প্রতিবছরই বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমাদের অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই সব বিবেচনা করে সাজ্জাত সাহেব শস্য শুকানোর জন্য যে ড্রায়ারটি উদ্ভাবন করেছেন তা বাংলাদেশের কৃষিতে  বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস।

গত বছর প্রকল্পটির অর্থায়নকারী কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়েস কবীর ও বাকৃবির সাবেক অধ্যাপক ড. বি. কে বালা মেশিনটি উদ্বোধন করেন।

ড্রায়ার পরিদর্শনের পর হাবিপ্রবি’র রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুল হক জানান, আমাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য মানুষের কাছে প্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেয়া।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কো ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কাজ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. মফিজ-উল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মোমিন সেখ এবং রিসার্চ ফেলো হিসাবে ছিলেন মো. এজাদুল ইসলাম, মো. আখতারুজ্জামান ও মো. হাসান তারেক মন্ডল।এবং গবেষণা প্রকল্পের কোলাবোরেটর ও প্রস্তুত করণে কাজ করেছে উত্তরণ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, বিসমিল্লাহ্‌ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ও আনসার ক্লাব, দিনাজপুর।

0 comments on “হাবিপ্রবি শিক্ষকের উদ্ভাবিত গ্রেইন ড্রায়ারের সফলতায় কৃষকের মাঝে আলোড়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *