Thursday, 28 March, 2024

সর্বাধিক পঠিত

পরিবেশ দূষণ রোধে সবাইকেই এগিয়ে আসার আহ্বান


বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে একটি ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

শনিবার (৫ জুন) এ সেমিনারে বাংলাদেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য পরিবেশ সচেতনার বার্তা সবাইকেই মেনে চলতে এগিয়ে আসার আহবান জানান বিশষজ্ঞরা।

বাকৃবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. এ কে এম জাকির হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক ফরিদ আহমেদ, এমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। এতে পরিবেশ দিবসের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসলাম আলী।

আরো পড়ুন
নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নতুন ভাইস চ‍্যান্সেলর অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস

মহামান্য রাষ্টপতি ও চ্যান্সেলর এঁর অনুমোদনক্রমে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন‍্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নতুন ভাইস চ‍্যান্সেলর হিসেবে অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস কে Read more

বাকৃবি’র নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। বুধবার Read more

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, অনেক সময় সংস্কার কাজের জন্য বৃক্ষ কাটতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত সম্পূর্ণ বৃক্ষ না কেটে ডালপালা কেটে অথবা অন্য কোনোভাবে সমন্বয় করে সংস্কার কার্য এগিয়ে নেওয়া। নদীনালা গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। যত্রতত্র পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে হবে। যেসকল এলাকায় পরিবেশ হুমকির মুখে, সেসকল এলাকায় বেশি বেশি নজর রাখতে হবে। সর্বোপরি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে এবং সচেতন হতে হবে সবাইকেই।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেন বলেন, আইপিসিসি এর মতে আগামী ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়বে যার ফলে বিপুল পরিমাণ নিম্নভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে আর অসংখ্য মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হয়ে পড়বে। এই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনের অন্যতম কারণ হলো নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা। যদিও গত এক দশকে আমরা অনেক বৃক্ষরোপণ করেছি কিন্তু প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যকে আমরা ফিরিয়ে আনতে পারিনি। তাই জীববৈচিত্র‍্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা রয়েছে তা ভুক্তভোগী দেশগুলোর মাঝে দ্রুত বিতরণ করতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, দেশে এখনো পরিবেশ দূষণ রোধে আইনের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে অনেক সময় দূষণকারীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনের সংশোধনী আনতে সরকারকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করতে পারলে পরিবেশ দূষণ রোধ করা আরো কিছুটা সহজ হবেও বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসলাম আলী বলেন, আমাদের জলবায়ুকে পুনরুদ্ধার করতে হলে গ্লোবাল মুভমেন্ট প্রয়োজন। অর্গানিক বর্জ্য রিসাইকেল করণ, খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বৃদ্ধি ও উপকূলীয় অঞ্চলকে পুনর্গঠন করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।

এসময় বক্তব্য দেওয়ার সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে নিয়ে জুন মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালনা করাসহ প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। তিনি মনে করেন, বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনার বার্তা পৌঁছানো এবং সবাইকে সচেতনার সাথে পরিবেশ রক্ষার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান। তিনি তার বক্তব্য বলেন, দেশে যেভাবে দূষণ শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। ইটের ভাটা, কলকারখানার বর্জ্য, পলিথিনের ব্যবহার, কীটনাশক ব্যবহারে দিনকে দিন অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের পরিবেশ। কিভাবে এগুলোর বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, তা আমাদেরকেই করতে হবে এবং সরকারকে পরিবেশ দূষণের যে আইন আছে, তার যথাযথ ব্যবহার করে পরিবেশ ঠিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বে যে করোনার ভয়াবহতা তার পিছনেও পরিবেশ দূষণই দায়ী। এজন্য অত্যাধিক হারে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

বাকৃবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই সেমিনারে যে পরামর্শগুলো উঠে এসেছে, তা পলিসি লেভেলে নিয়ে যেতে তিনি কাজ করবেন। যাতে করে বাংলাদেশকে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলা ও জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একইসাথে বিভাগের শিক্ষা, গবেষণাকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অধিদপ্তরের সাথে একসাথে কাজ করার কথাও জানান তিনি।

সেনিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাতেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রত্যেকেই যদি সচেতন হত তাহলে বাংলাদেশের পরিবেশ এত দূষিত হত না। কেবল পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সরকার একা দূষণ রোধ করতে পারবে না, এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকেই।

এসময় অনান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেরর অধ্যাপক ড. রেহেনা খাতুন, অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন, অধ্যাপক ড. মুরাদ আহমেদ ফারুখ, সহকারী অধ্যাপক হাফছা জাহান হিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষক, স্নাতকোত্তর, স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা

0 comments on “পরিবেশ দূষণ রোধে সবাইকেই এগিয়ে আসার আহ্বান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *