Wednesday, 15 May, 2024

সর্বাধিক পঠিত

গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষনা করলো সরকার


করোনাকালে-রাষ্ট্রায়ত্ত-পাটকল-বন্ধ-ঘোষণা

সোনালী আঁশে সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এই স্বপ্ন নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। ৭০টিরও বেশি পাটকল ছিলো বিজেএমসির আওতায়। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারনে মিল সংখ্যা কমতে কমতে ২৫-এ নেমে আসে। গত ২রা জুলাই বাংলাদেশ সরকার এই পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষনা করেছেন। যখন কভিড-১৯ এর কারনে বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা বাড়ছে, বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো সঠিকভাবে মুনাফা অর্জন করছে ঠিক তখনই এমন একটা সম্ভাবনাময় সময়ে সরাকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবোধোক করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে “ প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসানে ছিলো বিজেএমসি। বর্তমানে বিজেএমসির হিসেব অনুযায়ি ক্ষতির পরিমান ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

গত ২রা জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকালে গনভবনে পাটকল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বন্ধের বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেই পাটকল বন্ধের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংবাদ বিফ্রিং এর মাধ্যমে একইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন ঘোষণা করেন। প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মাদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ঘোষনার কারন হিসেবে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন সরকারি খাতের পাটকলগুলর সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে শ্রমিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয় ।সরকারি খাতটি অত্যান্ত সংকুচিত হয়ে গেছে যা কিনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেও অপারগ। এই পাটকলগুলোকে কিভাবে প্রতিযোগিতায়  অংশ নেয়ার উপযোগী করা যায় এবং আরো শক্তিশালী করা যায় সেই বিবেচনার প্রেক্ষিতেই এখন পাটকলগুলো বন্ধ করার ঘোষনা করা হয়েছে।

মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস আরো বলেন,রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ থাকলে যে পরিমান ক্ষতি হয় চালু থাকলে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়। আর সে জন্যই এসব পাটকলের সাথে সম্পর্কিত শ্রমিক ভাইদের জীবিকা নিশ্চয়তার জন্য সরকার তাদের ২০১৫ সালের জাতীয় মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ন মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকার এ নির্দেশনাও দিয়েছেন বন্ধ পাটকলগুলো চালু করার সময় যাতে বর্তমান ও আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে প্রতিযোগীতা করতে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সমস্ত কর্মপরিকল্পনা করে  দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরো পড়ুন
বায়োফ্লকের পানি তৈরি করার পদ্ধতি বা নিয়ম
বায়োফ্লক ট্যাংক

বায়োফ্লকে পানি তৈরি বায়োফ্লক মাছ চাষের অন্যতম প্রধান কাজ। বায়োফ্লক শুধুমাত্র ফ্লক তৈরি করতে না পেরে অনেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। Read more

চলমান তাপ প্রবাহে হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা
চলমান তাপ প্রবাহে হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা

তীব্র তাপপ্রবাহ হাঁস- মুরগি ও গবাদিপ্রাণির দেহে নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পীড়ন (স্ট্রেস) তৈরি করে, ফলে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপ্রাণির Read more

রাষ্টায়ত্ত পাটকলগুলোর অতীত তুলে ধরে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী তিনদিনের মধ্যে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।২০১৫ সালের সর্বশেষ জুরি কাঠামো অনুযায়ি পাটকলগুলোর ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের ৫হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ।পাটখাতের প্রতি বিশেষ নজর রেখে প্রধানমন্ত্রীর দর্শন হচ্ছে পাটকল শ্রমিকদের বাঁচানো।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ধরন সম্পর্কে বলেন, পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক অনাধিক দুই লাখ টাকা প্রাপ্য তাদের পুরো টাকা এককালীন নগদ পরিশোধ করা হবে।পাওনা টাকার মধ্যে ৫০ শতাংশ এককালীন নগদ এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবন জীবিকা করার লক্ষ্যে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে।

গত ২৫ শে জুন পাটকল বন্ধ সংক্রান্ত প্রস্তুতি সভা শেষে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক বলেছিলেন, “আমরা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেব। আগে মিলগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিলো, আর এখন সেটা বিক্রি না করে জুট মিলই রাখবো। যোগ্য ম্যানেজমেন্ট দেবো যাতে লোক ছাটাই না হয়। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দেয়া কর্মীরা এখানেই চাকরী পাবেন, কারন দক্ষ কর্মী ছাড়া মিল চালাতে দেয়া হবে না। সব মিলগুলো বুঝে পাওয়ার পরই টেন্ডার দেয়া হবে যে বেশী দেবে তাকেই দেয়া হবে কিন্তু হি মাস্ট বি এ জুত মিল এক্সপার্ট। জুট মিল এক্সপার্ট হলেই কাজ করবে আর এক্সপার্ট না হলে জমি নেয়ার চেষ্টা করবে কিন্তু আমরা তা হতে দেবোনা”। তিনি আরও বলেন , প্রধানমন্ত্রী বলেছেন – যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাটের জন্য আন্দোলোন করেছেন সেহেতু পাটকে আমাদের রাখতেই হবে। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধমে জুট মিল থাকবে, এটা ডিসাইডেড।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান

পাটকল শ্রমিকদের বঞ্চনার অবসান” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সমুহের বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান সহ পাটখাতে প্রতিযগিতামুলক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাটকল শ্রমিকদের প্রাপ্য নমুনা সম্পর্কিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে গনপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়।

পাটকল শ্রমিকদের প্রাপ্য নমুনা জানতে এখানে ক্লিক করুন……।

0 comments on “গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষনা করলো সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *