Thursday, 02 May, 2024

সর্বাধিক পঠিত

চাপা ফুলের সবিস্তার পরিচিতি, দ্বিতীয় পর্ব


গত পর্বে আমরা চাপার অনেক গুলো প্রজাতি দেখেছি এবং জেনেছি। সেগুলো ব্যতিরেকে আরও কিছু চাপা ফুল রয়েছে। েএই ফুলগুলোর কোনটার শেষে চাপা রয়েছে। আবার কোনটার নাম পরবর্তীতে পুরোটাই পরিবর্তন হয়েগেছে বা আমরা অন্য কোন নামে চিনি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক চাপা ফুলের সবিস্তার পরিচিতি র দ্বিতীয় অংশে আরও কিছু চাপা ফুল সম্পর্কে।

গুলঞ্চচাঁপা বা কাঠ গোলাপ

এই ফুলটির আদি নিবাস সুদূর মেক্সিকো। বর্তমানে আমাদের দেশে দারুণ জনপ্রিয় এই ফুল। এই ফুলের নামও অনেকগুলো-  গুলাচি, গোলকচাঁপা, চালতাগোলাপ, গরুড়চাঁপা, কাঠচাঁপা ইত্যাদি। এই ফুলের রয়েছে বর্ষব্যাপ্ত বিচিত্র রঙের প্রস্ফুটন। তাছাড়া কাঠগোলাপ (plumeria spp) দারুণ সুগন্ধিও বটে। এই গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে শীতের শেষ দিকে।  নিষ্পত্র অবস্থায় একটি সুন্দর ভাস্কর্যের মতো দেখা যায়। বসন্তের শেষ ভাগে  দু-এক থো

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

কা করে ফুল ফুটতে শুরু করে। গ্রীষ্মকালে ফুল ও পাতার পরিপূর্ণতা আসে। এই ফোটা অব্যাহত থাকে শীত অবধি। এই গাছটি ৮-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। কাণ্ড রুক্ষ, অমসৃণ ও খসে পড়া বাকলের রং ধূসর। এর ডালপালাগুলো নরম ও দুধকষভরা।

বিভিন্ন প্রজাতির পাতার গড়ন বিভিন্ন রকম। এই ফুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বিচিত্র গড়ন ও বর্ণবৈচিত্র্য। একেবারে দুধের মতো সাদা, কিংবা সাদা পাপড়ির কেন্দ্রে স্পষ্ট হলুদ দাগ, অথবা কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের।

হিমচাঁপা বা উদয় পদ্ম

এই ফুলটির পোশাকি নাম ম্যাগনোলিয়া। পৃথিবীজুড়ে যার অসংখ্য প্রজাতি ছড়িয়ে আছে। ম্যাগনোলিয়া হিমালয় অঞ্চলের আদি উদ্ভিদ প্রজাতি বলে মনে করা হয়। সুদীর্ঘ সময়ের বিবর্তিত রূপ বর্তমান ফুলটি। বর্তমানে সচরাচর প্রাপ্ত প্রজাতি আমেরিকার ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের প্রজাতি। আমাদের দেশে এটি সংখ্যায় কম। ঠান্ডাপ্রবণ অঞ্চলে কিংবা জন্মস্থানে গাছ বেশ উঁচু হয়। রবীন্দ্রনাথ ম্যাগনোলিয়া ফুলকে উদয় পদ্ম নাম দিয়ে আপন করে নিয়েছেন। এর অপর নাম হিমচাঁপা নাম । আমাদের দেশিয় একমাত্র ম্যাগনোলিয়ার নাম দুলিচাঁপা। সিলেটের পাহাড় অঞ্চলে তাদের দেখা যায়।

.ফুলের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়, কারণ বৃদ্ধি হয় মন্থর গতিতে।

েউচ্চতায় ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত উঁচু, কাণ্ড শক্ত ও কালচে রঙের। কুঁড়ি বাদামি ও রোমশ। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো। পিঠের রং খয়েরি ও বুকের দিকটা সবুজ রঙের। ফলে অন্যান্য গাছ থেকে উদয় পদ্মকে (magnolia grandiflora) খুব সহজেই আলাদা করা যায়। বসন্তের শেষ ভাগে, সাদা, সুগন্ধি ও বড় আকারের ফুলগুলো ফোটে।   ফুল ১৫-২০ সেমি চওড়া, পাপড়ি ৬-১২টি। গ্রীষ্মকাল খুব ভালোভাবে ফোটে। এই গাছ রোদ পছন্দ করলেও চারা তৈরি করতে হয় ছায়ায়। বংশবৃদ্ধি করা সহজ গুটিকলমে।

কনকচাঁপা

কনকচাঁপার গান শোনেননি এটা খুব কম মানুষই আছে। বেশ কিছু দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন তিনি। তার নাম কিন্তু কনকচাঁপা ফুলের নামানুসারে। আমাদের দেশিয় অতি পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য ফুল। দুর্লভ হওয়ার কারণে ফুলটি আমাদের কাছে নামে পরিচিত হলেও অবয়বে পরিচিত নয়। এ ফুলের উল্লেখ আছে প্রাচীন মৈমনসিংহ গীতিকায়ও।

উদ্ভিদবিজ্ঞানের মাপকাঠিতে চাঁপার সাথে এর অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।  কনকচাঁপা  বর্ণে, গন্ধে সে অনুপম, অনন্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

কনকচাঁপা ছোটখাটো ধরনের গাছ, কাণ্ড মসৃণ ও বাকল ধূসর রঙের। শীতের শেষে সব পাতা ঝরে যায়। বসন্তের হলুদ সোনালি রঙের সুগন্ধি ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। অল্প কদিনেই নিঃশেষ হয়ে আসে ফুল। গাছের শিকড় দীর্ঘ ও আঁকাবাঁকা। সাঁওতাল উপজাতির লোকজন এই শিকড় সর্প দংশনের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে।

এর ছালের রস হজমে সহায়তা করে। কনকচাঁপার আদিনিবাস আমাদের দেশ। এছাড়াও এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক নাম Ochna squarrosa.

নাগেশ্বর

নাগেশ্বর এই অঞ্চলের অনেক পুরনো ফুল এর একটি। হিমালয়ের পূর্বাঞ্চল হতে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এবং বাংলাদেশ-ভারতের অনেক স্থানেই নাগেশ্বর সহজলভ্য। সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় তুলনামূলকভাবে একটু বেশি দেখা যায়। পূর্ব-শ্রীহট্টের লোকগীতিতে এর উল্লেখ আছে।

দৃঢ়তা, গঠনসৌষ্ঠব, ফুল ও পাতার সৌন্দর্য ্ইএবং দীর্ঘ জীবন, গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নাগেশ্বর দীর্ঘাকৃতির বৃক্ষ, কাণ্ড গোল, সরল, মসৃণ ও ধূসর রঙের। দেখতে অনেকটা পিরামিড আকৃতির।  পাতা সরু ও মসৃণ। আগা তীক্ষ্ণ।  বসন্তকালে নাগেশ্বর (mesua nagassarium) ফোটে ।

জ্বালানি ও বাতের মালিশ হিসেবে বীজ তেল ব্যবহৃত হয়। ফুল থেকে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট মানের আতরও ।

0 comments on “চাপা ফুলের সবিস্তার পরিচিতি, দ্বিতীয় পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *