Thursday, 25 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

এবছর ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন বেশি হবে- কৃষিমন্ত্রী


চলতি বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না করলে বোরো ধান উৎপাদনে আর কোন প্রভাব পড়বে না। গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ১০ লাখ টন উৎপাদন বেশি হবে।

মঙ্গলবার (১১ মে) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘বোরো ধানের উৎপাদন পরিস্থিতি ও কৃষির সমসাময়িক বিষয়’ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে হাওরের শতভাগ ও সারা দেশের শতকরা ৬৪ ভাগ বোরো ধান কর্তন শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই অবশিষ্ট ধান কর্তন সম্পন্ন হবে। সারা দেশে এবছর ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

হাওরের শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারা অত্যন্ত আনন্দের ও স্বস্তির উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, হাওড়ভুক্ত ৭টি জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে; যা দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। আর শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।

ধানকাটা মেশিন দ্রুত মাঠে দেয়া এবং সরকারি তত্ত্বাবধানে শ্রমিকের সময়মত যাতায়াত সুগম করার ফলেই এ বছর দ্রুততার সাথে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, গত বছর একই তারিখে সারা দেশের মাত্র ৩৩ ভাগ ধান কর্তন সম্ভব হয়েছিল। ধান কাটার মেশিন ও শ্রমিকের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি জানান, এবছর শুধু হাওড়ভুক্ত ৭ জেলাতেই বহিরাগত শ্রমিক আনা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার জন (৪৯১০৮ জন)। এছাড়া, এবছর ধান কাটতে ২৬২০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৭৮৯টি রিপার মাঠে চলমান আছে। ‘প্রতিবছর কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের ক্ষেত্রে এটি নতুন মাত্রাযোগ করেছে। এতে একদিকে শ্রমিক সংকট থাকলেও দ্রুত ধান কাটা যাচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ কমার ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে’ বলেও উল্লেখ করেন ড. রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেন, ‘অঞ্চলভেদে ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ধান কাটাসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদেরকে দেয়া হচ্ছে। এটি সারা বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা’।

মন্ত্রী জানান, বোরো ধান দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরে মোট উৎপাদিত চালের ৫৫ ভাগের বেশি আসে এ বোরো থেকে। বছরে যে পরিমাণ (২ কোটি টনের মত) বোরো উৎপাদন হয়, তার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৭৫ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রী বলেন, গত আউশ-আমনের ক্ষতি পোষাতে এবছর বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদেরকে প্রদান করা হয়েছে। ফলে, গত বছরের তুলনায় এবছর ১ লাখ ২৯ হাজার ৩১৩ হেক্টর বেশি (২.৭২% বেশি) জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ জন কৃষককে ২ লাখ হেক্টর জমি আবাদের জন্য ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড ধানের বীজ বিনামূল্যে দেয়া হয়।

এ বছর গড় ফলনের পরিমাণও বেশী হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গত বছর দেশে বোরো ধানের গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩.৯৭ মেট্রিক টন; এবছর গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে প্রতি হেক্টরে ৪.১৭ মে.টন। অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বেড়েছে এবছর ০.২০ মে.টন (৫.০৪%)। তবে সারা দেশের শতভাগ ধান কাটা হয়ে গেলে গড় ফলনের পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবেও বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এই ফলন বেশি হওয়ার কারণ এ বছর হাইব্রিড ধানের উৎপাদন যেমন বেশি হয়েছে, উচ্চফলনশীল ধানের প্রচলন ও সম্প্রসারণও বেশি হয়েছে। এসময় তিনি ব্রি-৮১, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ জাতের ধান-যেগুলোর ফলন প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ মণ, চাষে কৃষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

হিটশকে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিদেরকে জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ১০৫জন কৃষককে জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে নগদ সহায়তা প্রদান শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। এতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

চলতি আউশ মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবছর ১৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্টিক টন চাল। এ লক্ষ্য অর্জনে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কৃষককে (কৃষক প্রতি ১ বিঘা) চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া, মৌলভীবাজার জেলার পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে ৩ হাজার কৃষকের মাঝে ১৫ মেট্রিক আউশ বীজ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রী জানান, আগামী ৩ বছরের মধ্যে পেঁয়াজ ও পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত আছে।

এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মহাপরিচালক(বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

0 comments on “এবছর ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন বেশি হবে- কৃষিমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *