Friday, 29 March, 2024

সর্বাধিক পঠিত

তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি


তেলাপিয়া মাছ

তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি জেনে সঠিক ভাবে চাষ করলে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনা করা হয় তাহলে অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্বেও ৩-৪ মাসে একেকটি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ ২৫০-৩৫০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন, সহজ চাষ পদ্ধতি এবং বাজারে চাহিদা থাকায় এ মাছের চাষ অত্যন্ত লাভজনক।

মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষে সাফল্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ্য-সবল ও উন্নত জাতের ১০০% পুরুষ পোনা সংগ্রহ ও সঠিক পদ্ধতিতে মজুদ ও লালনপালন করা। বিশেষ করে নার্সারি পর্যায়ে অত্যন্ত যত্নের সাথে পরিচর্যা করতে হয়।

নার্সারি পুকুর নির্বাচন

আরো পড়ুন
করলার লাভজনক চাষ পদ্ধতি
লাভজনক করলা চাষ

করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে Read more

বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ

বাগদা চিংড়ির (ব্ল্যাক টাইগার) চেয়ে ভেনামির উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। তারপরও বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ ? Read more

১। নার্সারির জন্য ছোট আকারের পুকুরই আদর্শ পুকুর। সাধারণত ২০-২৫ শতাংশ হলে ভাল হয়।

২। নার্সারি পুকুরটি আয়তাকার, বন্যামুক্ত ও বেলে-দোআঁশ মাটি বিশিষ্ট হলে ভাল হয়।

৩। নার্সারির ক্ষেত্রে পানির আদর্শ গভীরতা ৩-৪ ফুট। পানির গভিরতা এর কম না হওয়া ভাল।

৪। পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ার সুযোগ থাকলে প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি তৈরি হয়।

নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি

১। জলাশয়ের পুরাতন পানি সম্পূর্ণরুপে অপসারণ করে পুকুরের তলা ৭-৮ দিন রৌদ্রে ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা অপসারণ করে ফেলতে হবে।

পুরাতন পানি সম্পূর্ণরুপে অপসারণ করা না গেলে, যথাসম্ভব পানি কমিয়ে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট পানির গভীরতায় ৩০-৪০ গ্রাম হারে রোটেনন পাউডার প্রয়োগ করে সকল মাছ ও অনাকাংক্ষিত প্রাণী দূর করতে হবে।

২। প্রয়োজনীয় মোট রোটেননের দুই-তৃতীয়াংশ পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং একই সাথে অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ অল্প পানিতে পেস্ট করে ছোট ছোট বল বানিয়ে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

সম্পূর্ণরুপে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ নিশ্চিত করতে পুকুর শুকিয়ে তলার কাদায়ও রোটেনন প্রয়োগ করা যায়। এতে কাদার ভিতরে থাকা সব মাছ মারা যায়।

এছাড়া গ্যাস ট্যাবলেট বা ফোসটক্সিন ট্যাবলেট ব্যাবহার করে ও রাক্ষুসে মাছ মারা যায়।

৩। পুকুরের তলা ও পাড় থেকে সকল জলজ উদ্ভিদ ও আগাছা দূর করতে হবে। প্রয়োজন হলে পাড় মেরামত করে নিতে হবে। পাড়ে বড় গাছ থাকলে ডালপালা কেটে ছোট করতে হবে যেন পাতা পড়ে পানি নষ্ট না হয় এবং পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়তে পারে।

৪। পুকুর শুকানো বা রাক্ষুসে ও অনাকাংক্ষিত মাছ দূর করার ২/৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

চুন পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে চুনের দ্রবণ ঠান্ডা হওয়ার পরই ছিটাতে হবে এবং মাস্ক বা সুবিধাজনক কাপড় দিয়ে ব্যবহারকারীর নাক ও মুখ ঢেকে নিতে হবে।

৫। চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। পুকুরে গভীর নলকূপের পানি প্রবেশ করানোই উত্তম। নদী, খাল-বিল বা অন্য কোন পুকরের পানি ব্যবহার করতে হলে পানি প্রবেশমুখে সূক্ষ ছিদ্রবিশিষ্ট ফিল্টার নেট স্থাপন করতে হবে যেন কোনপ্রকার অনাকাংক্ষিত প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে।

৬। পানি দেয়ার পরপরই (অন্যভাবে চুন প্রয়োগের ৩/৪ দিন পর) পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ৫ কেজি জৈব সার (পঁচা গোবর/কম্পোস্ট), ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫ গ্রাম এমওপি (পটাশ) সার দিতে হবে।

৭। সার  প্রয়োগের ৫/৬ দিন পর পানির রং সবুজাভ বা হালকা বাদামী হবে যা পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের (প্ল্যাংকটন) উপস্থিতি নির্দেশ করে। এসময় পুকুরে পোনা ছাড়তে হয়।

পানির প্ল্যাংকটন জনিত সচ্ছতা ৮-১২ ইঞ্চি হওয়া ভাল। প্ল্যাংকটনের স্বল্পতা কিংবা আধিক্য উভই মাছ চাষের জন্য ক্ষতিকর।

৮। পুকুরের চারপাশ ফিল্টার নেট দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে যেন সাপ, ব্যাঙ ও অন্যান্য অনাকাংক্ষিত প্রাণী ঢুকতে না পারে।

চাষের পুকুরে পোনা মজুদ

পোনা ছাড়ার পূর্বে যথাযথ নিয়মে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে। প্রতি শতাংশে ১৫০-২৫০টি তেলাপিয়া ও ১৫-৩০টি বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের পোনা মজুদ করা যায়। তবে উন্নততর চাষ ব্যবস্থাপনায় মজুদ ঘনত্ব আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব।

নিমোক্ত পোনা মজুদের তিনটি মডেল দেখানো হল।

প্রতি শতাংশে পোনার সংখ্যা

প্রজাতিমডেল ১মডেল ২মডেল ৩
মনোসেক্স তেলাপিয়া১৫০২০০২৫০
সিলভার কার্প
বিগহেড কার্প
কাতলা
রুই
মৃগেল/কালিবাউস
মিরর কার্প/কমন কার্প
ঘনিয়া/বাটা
গ্রাস কার্প
সরপুটি
মোট১৮০২২৫২৬৫

কিছু লক্ষণীয় বিষয়:

১। সকাল বা বিকাল বেলায় (যখন তাপমাত্রা কম থাকে) পোনা ছাড়তে হয়।

২। পোনা ছাড়ার আগে অবশ্যই পুকুরের পানির সাথে অভ্যস্থকরন করতে হবে।

৩। পোনা বহনকারী পাত্রে ৫ পিপিটি (১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম) হারে লবণ যোগ করে ১-২ মিনিট ধরে পোনা শোধন করে নিতে হবে।

৪। পুকুরের পানির তাপমাত্রা ও বহনকারী পাত্রের পানির তাপমাত্রা সমান হবার পর পাত্র থেকে পোনা ধীরে ধীরে পুকুরে স্থাপিত হাপায় রাখতে হবে। প্রায় ১ ঘন্টা পর হাপা থেকে গুনে গুনে ভাল ও সতেজ পোনাগুলি পুকুরে ছাড়তে হবে। দূর্বল পোনা পুকুরে ছাড়া যাবেনা।

৫। পোনা মজুদের পরপরই প্রতি শতাংশে ৫০০ গ্রাম হারে সমস্ত পুকুরে লবণ প্রয়োগ করতে হবে।

তেলাপিয়া মাছের খাবার দেবার নিয়ম – বিস্তারিত

0 comments on “তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *