Saturday, 20 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে খামারের বর্জ্য অপসারণ


নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কৃষিখাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের শ্রম ও খরচ কমেছে। অপরদিকে বেড়েছে উৎপাদন। প্রযুক্তির ছোঁয়া পড়েছে ডেইরি খামারেও।

বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী ডেইরি খামারের বর্জ্য অপসারণের জন্য স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. আজমল হুদা তপন।

যন্ত্রটির নাম ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’। এই বৈদ্যুতিক স্ক্রাপার যন্ত্রের সাহায্যে গরু দাঁড়ানো অবস্থায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে খামারের বর্জ্য পরিস্কার করবে ও ড্রেনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য জমা করবে।

আরো পড়ুন
ধান উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে -কৃষি সচিব

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছেন “ধান উৎপাদনে যান্ত্রিকীকরণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ধান আমাদের প্রধান খাদ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা Read more

কৃষি ঋণ সহজ করতে ব্যাংকের শাখায় চালু করতে হবে কৃষি ঋণ বুথ – কৃষি সচিব

সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সভায় কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন কৃষকের দরজায় ঋণ নিয়ে যাবে ব্যাংক। ব্যাংকের Read more

প্রচলিত খামার ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। খামারে লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে খামারের কাজ ও জীব নিরাপত্তা সময়মত নিশ্চিত করতে না পারা। এই চিন্তা থেকেই খামারের বর্জ্য অপসারণের জন্য বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরি করেছেন এই উদ্ভাবক। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা. আজমল হুদা তপনের ডেইরি খামারে অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ যন্ত্রটি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে খামারের গরুর কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।

ডা. মো. আজমল হুদা তপন বলেন, এ যন্ত্রটি বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করলে আরো কম দামে খামারিদের কাছে সরবরাহ করা সম্ভব। সরকারি সহায়তা পেলে খুব শিগগিরই যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। সারাদেশের ডেইরি খামার যান্ত্রিকীকরণে এই যন্ত্রটি ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খামারের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি খামারের বর্জ্য অপসারণের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, এটি নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি চিন্তা করতে লাগলাম খামারে স্বয়ংক্রিয় কোনো যন্ত্র লাগানো যায় কিনা, তাহলে খুব সহজেই ডেইরি খামারের জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যাবে। এই চিন্তা থেকেই কাজ শুরু করলাম।

বর্তমানে এ যন্ত্রটি আমার ডেইরি খামারে সফলভাবে কাজ করছে। বিসিএসের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পর চিন্তার বাস্তবায়ন শুরু। দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রচেষ্টার পর সফল হই এই দেশিয় যন্ত্রটি তৈরি করতে।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক ভাবে নিজস্ব খামারে ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ ব্যবহার হচ্ছে। যন্ত্রটি খুব স্বাভাবিক ভাবেই খামারে কাজ করছে। খামারিকে প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই খুব সহজেই এই যন্ত্রের কার্যাবলি বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত যেসব খামারে ১০-১২টি গরু আছে, সেখানে এই যন্ত্রটি হতে পারে খামার যান্ত্রিকীকরণেই প্রাথমিক পদক্ষেপ। এখন নিজের ডেইরি খামারে খুব সফল ভাবে কাজ করছি। যন্ত্রটিকে সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করলে এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী থাকবে।’

কিশোরগঞ্জ উপজেলার রনচন্ডি ইউনিয়নের দালাল পাড়া গ্রামের খামার পরিচর্যাকারী রেজাউল করিম বলেন, ‘আগে অনেক সময় খামারে কাজের লোক পাওয়া না গেলে খামার অপরিস্কার হয়ে থাকত এবং খামারে প্রায়ই বিভিন্ন রোগ বালাই লেগে থাকত। কিন্তু বর্তমানে এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে, এসব সমস্যা নেই। কারণ খামারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে থাকে না।’

খামারে ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ ব্যবহারের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সম্পর্কে উদ্ভাবক আজমল হুদা তপন বলেন, ‘যেখানে শ্রমিকের মাধ্যমে খামার পরিচালনা করলে ১০-১২টি গরুর খামারে ১০ বছরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা শুধু বর্জ্য অপসারণে শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রয়োজন হয় সেখানে এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহারে মাত্র দেড় লক্ষ টাকার প্রয়োজন। প্রাথমিক ভাবে যন্ত্রটি প্রস্তুত করতে ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন।

0 comments on “স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে খামারের বর্জ্য অপসারণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *