Saturday, 15 November, 2025

কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: কৃষকের করণীয়


কৃষিতে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে কৃষকের চিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে, যার ফলে ফসলের উৎপাদন হ্রাস, নতুন রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে:

আরো পড়ুন
পেঁয়াজের বাজারে ফের অস্থিরতা: সপ্তাহেই দাম বাড়লো ২০-২৫ টাকা
পেঁয়াজের দামে হঠাৎ মৌসুম শেষের অস্থিরতা

চলতি বছর দেশীয় পেঁয়াজ প্রায় পুরোটা সময়ই বাজারের চাহিদা মিটিয়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ সময়ে এসে বাজারে Read more

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময়সীমা বাড়লো: ৫০ প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন সুযোগ
রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চাল

রপ্তানির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর অবশেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার Read more

  • তাপমাত্রা বৃদ্ধি: গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ফসলের জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, ফলন কমছে এবং কিছু ফসলে (যেমন বোরো ধান) চিটার পরিমাণ বাড়ছে।
  • অনিয়মিত বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাতের ধরন ও পরিমাণে তারতম্য আসায় কোনো অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও বন্যা, আবার কোনো অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী খরা দেখা দিচ্ছে।
  • লবণাক্ততা বৃদ্ধি: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের জল প্রবেশের ফলে কৃষি জমিতে লবণাক্ততা বাড়ছে, যা ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করছে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে ও তীব্রতা বাড়ছে, যা সরাসরি ফসল ধ্বংস করছে।
  • পোকা ও রোগ: উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বাড়ার কারণে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও ফসলের রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষকের করণীয় (জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর উপায়)

কৃষকদের এই প্রভাবগুলো মোকাবিলা করার জন্য ‘জলবায়ু-সহনশীল কৃষি’ (Climate-Smart Agriculture) পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

১. ফসলের জাত ও সময় পরিবর্তন

  • সহনশীল জাত নির্বাচন: বন্যা, খরা, লবণাক্ততা বা উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল ফসলের জাত (যেমন: ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৬৭) নির্বাচন করে চাষ করা।
  • চাষের সময় পরিবর্তন: আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ফসলের বপন ও রোপণের সময় আগে বা পরে নিয়ে আসা, যাতে চরম আবহাওয়ার আগেই ফসল কাটা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আগাম বন্যার কবল থেকে বাঁচতে স্বল্পমেয়াদি জাতের বোরো ধান চাষ করা।
  • ফসলের বহুমুখীকরণ: শুধু একটি ফসলের উপর নির্ভর না করে জমিতে একাধিক (যেমন: ধান, ডাল, তেলবীজ, সবজি) ফসলের চাষ করা। এতে একটি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্যটি থেকে লাভ হবে।

২. আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার

  • জলবায়ু-সহনশীল কৌশল:
    • কভার ক্রপ (Cover Crop) বা আচ্ছাদন শস্য চাষ করে মাটির উর্বরতা ও আর্দ্রতা বজায় রাখা।
    • শূন্য বা ন্যূনতম কর্ষণ (Zero/Minimum Tillage) পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির গঠন ঠিক রাখা ও সেচের প্রয়োজনীয়তা কমানো।
  • অধিক জলবায়ু সহনশীল পদ্ধতি: সম্ভব হলে কৃষি-বনায়ন (Agroforestry) বা বহু-ফসল চাষ (Intercropping) পদ্ধতি অনুসরণ করা। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. জল ও সেচ ব্যবস্থাপনা

  • সাশ্রয়ী সেচ: সেচের জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং কম পানি লাগে এমন সেচ পদ্ধতি (যেমন: ড্রিপ ইরিগেশন বা ফোঁটা সেচ) ব্যবহার করা।
  • জলবায়ু-সহনশীল শস্য: খরা প্রবণ এলাকায় কম জল প্রয়োজন হয় এমন ফসল (যেমন: ভুট্টা, ডাল, তিল) চাষ করা।

৪. পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ

  • জৈব নিয়ন্ত্রণ: ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমনে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক বা প্রাকৃতিক শত্রুর ব্যবহার বাড়ানো।
  • নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে শস্য ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করা এবং রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা গেলে দ্রুত কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া।

৫. জ্ঞান ও তথ্য সংগ্রহ

  • আবহাওয়ার তথ্য: স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বা কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্র থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য সংগ্রহ করা।
  • প্রশিক্ষণ: কৃষি বিভাগ বা বেসরকারি সংস্থা প্রদত্ত জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।

এই কৌশলগুলো মেনে চললে কৃষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে এবং তাদের কৃষি উৎপাদন ও জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে পারবে।

0 comments on “কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: কৃষকের করণীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ