Thursday, 25 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

শকুন রক্ষায় বন্ধ হচ্ছে কিটোপ্রোফেন উৎপাদন


মহাবিপন্ন শকুন রক্ষায় ব্যথানাশক ভেটেরিনারি কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের উৎপাদন বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আমাদের দেশে খুবই ডেনজারাসলি শকুনের সংখ্যা কমে গেছে, খুবই বিপজ্জনক অবস্থায়। সত্তরের দিকে দেশে ৫০ হাজারের মতো শকুন ছিল, এখন তাদের (মন্ত্রণালয়) হিসাবে মাত্র ২৬০টি আছে। তাও ক্রিটিক্যালি অবস্থায় আছে। এটার অন্যতম কারণ হলো কিটোপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ইউজ করার কারণে, এই ওষুধটা শকুনের মধ্যে গেলে মারা যায়।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

তিনি আরও জানান, ফার্মাসিউটিক্যালস, ড্রাগ কোম্পানি ও এক্সপার্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। এই কিটোপ্রোফেন ওষুধ যদি বন্ধ না করা যায় তাহলে শকুন এদেশে বাঁচবে না।

তিনি বলেন, শকুন যদি না থাকে সেক্ষেত্রে পুরো দেশের মধ্যে যে পরিমাণ মৃত পশু-পাখি থাকে সেগুলোতো পরিবেশ নষ্ট করে, রোগজীবাণু ছড়ায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অন্যতম একটা উপজীব্য হিসেবে শকুন কাজ করে। সেজন্য তারা বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা, সভা-সিম্পোজিয়াম করে সিদ্ধান্তে আসছে এটা বন্ধ করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিটোপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ বন্ধ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ম্যালোক্সিক্যাম (Meloxicam) নামে একটা ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।

তিনি বলেন, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব কম, এটা ব্যবহার করলে শকুন বা অন্য পাখির ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না, লাইফ রিস্ক হবে না, মন্ত্রিসভা এটাও অনুমোদন করেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ম্যালোক্সিক্যাম ওষুধ নিয়ে দেশের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ওটা (কিটোপ্রোফেন) তুলে নিলে কোনো ক্ষতি হবে না।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৬০টি শকুন আছে। ২০১০ সালে দেশব্যাপী শকুনের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করা হয়।

২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের দু’টি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালে দশ বছর মেয়াদী (২০১৬-২০২৫) বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। এই কর্মপরিকল্পনা অগ্রাধিকার দিয়েই শকুন সংরক্ষণে বর্তমানে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আর ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালীন বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ও সুন্দরবনে দু’টি ফিডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুন উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় ২০১৪ সালে শকুনের প্রজনন সফলতা ছিল ৪৪ শতাংশ, ২০২০ সালে বেড়ে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

0 comments on “শকুন রক্ষায় বন্ধ হচ্ছে কিটোপ্রোফেন উৎপাদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *