Friday, 29 March, 2024

সর্বাধিক পঠিত

বিলুপ্তির পথে উপকারী ঢোল কলমি


দেশ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঢোলকলমি (Ipomoea carnea) গাছ। ঢোল কলমি, বেড়াগাছ ও বেড়ালতা নামেও বেশ পরিচিত। ঢোল কলমি গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ। এর কান্ড দিয়ে কাগজ তৈরি করা যায়। সবুজ পাতার গাছটি ছয় থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

দৃষ্টি নন্দন ঢোল কলমি

নদীর ধারে, বিলের পাশে জন্ম নেয়া ঢোলকলমি গাছের ফুল যেকোন বয়সি মানুষের নজর কাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। পাঁচটি হালকা বেগুনি পাপড়ির ফুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।

আরো পড়ুন
করলার লাভজনক চাষ পদ্ধতি
লাভজনক করলা চাষ

করলার লাভজনক চাষ চাষ পদ্ধতি করলার ইংরেজি নাম Gourd, আমাদের দেশে করলা গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও বর্তমানে করলা বার মাসই বাজারে Read more

বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ

বাগদা চিংড়ির (ব্ল্যাক টাইগার) চেয়ে ভেনামির উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। তারপরও বাংলাদেশে কেন বাড়ছে না ভেনামি চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ ? Read more

ঢোল কলমি ফুল_Ipomoea carnea
ঢোল কলমি ফুল_Ipomoea carnea

সারা বছরই ঢোল কলমির ফুল ফুঁটে থাকে। তবে বর্ষার শেষে শরৎ থেকে শীতে ঢোলকলমি ফুল বেশি দেখা যায়। একটি মঞ্জরিতে চার থেকে আটটি ফুল থাকে। ফুলে মধুর জন্য কালো ভোমরাও আসে।

বেড়া তৈরিতে ও জমির ক্ষয় রোধে ঢোল কলমি

কলমি গাছ জমির ক্ষয় রোধ করে থাকে ও সুন্দর ফুল দেয়। দেশের গ্রামাঞ্চলে এই গাছ জমির বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করা যায় ঢোল কলমির ডাটা।

নদীর তীরে কিংবা বিশাল ফসলের মাঠে ঢোল কলমি জন্মে পাখির বসার জায়গা করে দেয়। এ গাছে বসে বিভিন্ন প্রকারের পাখি পোকামাকড় খায়। ফুলের মধু সংগ্রহ করতে কালো ভোমরার আনাগোনাও লক্ষ করা যায়। গ্রামের শিশুরা ঢোলকলমির ফুল দিয়ে খেলাও করে থাকে।

নদী তীর, খালপাড়ের মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখা, ভূমি ক্ষয় রোধ, ভাঙনরোধে ঢোলকলমি গাছের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভূমিকা রয়েছে। ঢোলকলমি ফুল সারা বছরই ফুটে থাকে।

তবে বর্ষার শেষ ভাগ থেকে শরৎ-শীতে প্রস্ফুটনের জোয়ার থাকে বেশি। একটি মঞ্জরিতে ৪-৮টি ফুল থাকে। ফানেলাকার আকৃতির ফুল। পাঁচটি হালকা বেগুনি বা হালকা গোলাপি পাপড়ি। ফুলে মধুর জন্য কালো ভোমরা আসে।

এক সময় দেশের বিভিন্ন যায়গাতে অধিকাংশ পরিবার ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ীর চারপাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমি ব্যবহার করতেন। কেউ কেউ আবার কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করতেন।

রান্নার কাজে ব্যবহার হত ঢোল কলমি

অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেছে। ঢোল কলমির বীজ ও পাতায় বিষাক্ত উপাদান থাকে এবং তেতো স্বাদের সাদা কষ থাকায় এর পাতা গরু, ছাগল ও মহিষ খায় না।

তাই বেড়া হিসেবে এটা ব্যবহারের চাহিদা অনেক বেশি। ঢোল কলমি খরা ও বন্যায় সহনীয় বলে প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম।

কিভাবে বিলুপ্তির পথে ঢোল কলমি ?

একধরনের গুজব দেশ জুড়ে ভয়ংকর আতঙ্ক ছড়িয়েছিল যে ঢোল কলমি গাছে থাকে এক ধরনের পোকা।

এই পোকা এতটাই ভয়ংকর যে, কামড় দিলে মৃত্যু অবধারিত, এমন কি স্পর্শ লাগলেও জীবন বিপন্ন হতে পারে। এইসব খবর রেডিও, টিভি, পত্রিকায় মহামারীর মৃত্যুর খবরের মত কবে ক’জন মরলো ক’জন হাসপাতালে গেল সে রকম ভাবে প্রচারিত হয়েছিল মাসজুড়ে।

সারাদেশে সাধারণ মানুষ গণহারে, এমনকি স্থানীয় অনেক সংগঠন ঢোল কলমি গাছ কেটে সাবার করেছিলো। এই বিদঘুটে নামের পোকাটি যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলো আমাদের এই দেশে, তার জুড়ি মেলা ভার!

শুধু গ্রামে না, ঢোল কলমি পোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছিলো খোদ রাজধানী ঢাকা শহরেও। এটা নাকি খুব বিষাক্ত এক পোকা, যার সংস্পর্শে আসলেই নির্ঘাত মৃত্যু। আতঙ্ক এই পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, ছোট বড় সবাই তটস্ত থাকতো কখন যেনো কি হয়।

আতংক যখন চরম পর্যায়ে তখন টিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ পোকাটি ধরে এনে নিজের হাতের ওপর ছেড়ে দিয়ে হাটিয়ে, তারপর হাত দিয়ে পিষে মেরে দেখিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে এটি আসলে খুবই নিরীহ একটি কীট, মোটেও প্রাণ সংহারি নয়। এরপর থেকেই আতঙ্ক কেটে যায়। কিন্তু ক্ষতি আর পূরন হয় নি !!

One comment on “বিলুপ্তির পথে উপকারী ঢোল কলমি

দিপঙ্কর

Dhol kolmi ful nia koto khela koresi. sohoje more na ei gas. amra nimoron boltam.

Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *