
বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে কৃষিতে কুমড়া একটি বহুল চাষকৃত ও জনপ্রিয় সবজি। সারা বছর চাষযোগ্য এই ফসলের পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য উভয়ই উল্লেখযোগ্য। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা না থাকলে ফলন ও গুণমান প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায় না। নিচে কুমড়ার ফলন বাড়ানোর জন্য কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যা যে কোনো কৃষক বা উদ্যোক্তার জন্য প্রযোজ্য।
উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন
- কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত উচ্চ ফলনশীল ও রোগপ্রতিরোধী জাত যেমন ‘বারি মিষ্টি কুমড়া-১’ বা ‘বারি মিষ্টি কুমড়া-৩’ নির্বাচন করুন।
- স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির সাথে উপযোগী জাত বাছাই করলে ফলন ও গুণমান দুটোই বাড়ে।
জমি প্রস্তুতি ও সার ব্যবস্থাপনা
- ৫–৬টি হালচাষ দিয়ে আগাছামুক্ত ও নরম মাটি তৈরি করুন।
- প্রতি শতকে ৮–১০ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট, সাথে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
- জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সেচ ও নিষ্কাশন
- কুমড়া গাছে নিয়মিত আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি, তবে জমিতে পানি জমে থাকা চলবে না।
- গ্রীষ্মকালে ৭–১০ দিন অন্তর এবং শীতকালে ১২–১৫ দিন অন্তর সেচ দিন।
রোগ-পোকা দমন
- মিলডিউ, ফলছিদ্রকারী পোকা ও লাউ বিটল কুমড়ার প্রধান শত্রু।
- প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে নিম জাতীয় বায়োপেস্টিসাইড বা অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- আগাম প্রতিরোধে ফসল পর্যায়ক্রমে রোপণ এবং রোগাক্রান্ত পাতা অপসারণ করুন।
লতা ছাঁটাই ও ফল ঝুলানো
- প্রধান লতা শক্ত হলে পার্শ্ব লতা ছাঁটাই করলে ফলের আকার বড় হয়।
- ফল মাটিতে না ছুঁয়ে থাকে সেজন্য খড় বা কাঠের উপর রেখে দিন, এতে পচন কমে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- ফল পূর্ণাঙ্গ হলুদ রঙ ধারণ করলে সংগ্রহ করুন।
- ঠান্ডা ও শুকনা স্থানে রেখে ৪–৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
উপসংহার সঠিক জাত নির্বাচন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যত্নশীল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কুমড়ার ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণ করলে কৃষকরা উৎপাদনশীলতা ও লাভ দুটোই বাড়াতে পারবেন।