Thursday, 21 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

মাছের রোগ নিয়ন্ত্রনে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ( KMnO4)


potassium permanganate in Fish diseases

মাছ চাষে পুকুরের সব মাছ একবারে তুলে বিক্রি করা একটা কষ্ট সাধ্য এবং কঠিন কাজ। মাছের স্ট্রেস ও নাড়াচাড়া (Handling) পরবর্তি ট্রিট্মেন্টে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর বিকল্প নেই।

আজ আমরা আলোচনা করব মাছ চাষে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট  এর ভূমিকা নিয়ে।

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (Potassium Permanganate) কি ?

আরো পড়ুন
রাজশাহীতে কেটে ইলিশ বিক্রি দাম ১৬০০ টাকা হতাশ ক্রেতা

রাজশাহীর বাজারে কাটা ইলিশ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে নগরের সাহেববাজারে ইলিশ কেটে বিক্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। রাজশাহীতে ইলিশ Read more

একুরিয়ামে মাছ পালনে করনীয়
Aquarium fish

একুরিয়ামে পালনযোগ্য বিভিন্ন ধরনের মাছ রয়েছে। গাপ্পি (Guppy), ছোট, রঙিন মাছ যা খুবই সহজে পালনযোগ্য, গোল্ডফিশ (Goldfish), প্রাচীন ও জনপ্রিয় Read more

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট হচ্ছে অজৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত KMnO4 এবং K+ ও MnO4 দ্বারা গঠিত. এটা লালচে কালো স্ফটিকাকার কঠিন পদার্থ, যেটি পানিতে দ্রভিভুত হয়ে তাৎক্ষণিক গোলাপি বা লালচে দ্রবণ তৈরি করে।

পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট বা পটাশ একটি শক্তিশালী অক্সিডাইজিং এজেন্ট বিধায় এর জীবানুনাশ করার ক্ষমতা আছে।

মাছ চাষে কিভাবে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট কাজ করে ?

পটাশ পুকুর বা জলাশয়ের বিভিন্ন জৈব যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে এবং বিভিন্ন অজৈব যৌগকে নিষ্ক্রিয় করে থাকে। এজন্য পুকুর বা জলাশয়ে পটাশের চাহিদা রয়েছে।পুকুর বা জলাশয়ভেদে এই চাহিদা ০.৫- ৭ মি.লি. গ্রাম/ লিটার হয়ে থাকে।

০.৫- ৭ মি.লি. গ্রাম/ লিটার অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় মাত্রায় পটাশ প্রয়োগ করলেই তবে ব্যাক্টেরিয়াসহ মাছের বিভিন্ন রোগের জীবাণু ধ্বংস হবে।

Tucker and Boyd ( 1977) দেখেছেন যে জৈব পদার্থ ও জৈব যৌগবিহীন অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানিতে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ৪ মি.লি.গ্রাম / লি. ( ৪৮ গ্রাম/ শতক/ ফিট পানি) এই হারে প্রয়োগ করলে গ্রাম নেগেটিভ ( gram negative) ব্যাক্টেরিয়া মারা যায়।

আবার বিশুদ্ধ পানিতে ১৬ মি. লি. গ্রাম/ লি. ( ১৯২ গ্রাম / শতক/ ফিট পানি) এই হারে পটাশ প্রয়োগ করলে গ্রাম পজেটিভ ( gram positive) ব্যাক্টেরিয়া মারা যায়।

মাছের প্রধান ( main) রোগ, রোগ সৃষ্টিকারী ব্যক্টেরিয়ার নাম ও ব্যক্টেরিয়ার ধরন

১) Furunculosisঃ- causative agent-Aeromonas salmonicida, gram negative.

২) Columnarisঃ- Causative agent- Flexibacter columnaris / Chondrococcus columnaris, gram negative.

৩) Dropsyঃ causative agent- Pseudomonas punctata, gram negative.

৪) Vibriosisঃ causative agent- Vibrio anguillarum, gram negative.

৫) Tuberculosisঃ causative agent- Mycobactrium piscium, gram positive.

৬) Gill disease ঃ causative agent- Myxobacteria, gram negative.

৭) Fin rot/ tail rotঃ causative agent- Myxobacteria, gram negative.

রোগ প্রতিরোধে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ব্যবহার 

সাধারণত গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারাই মাছে প্রধান প্রধান রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। জৈব পদার্থ দ্বারা দুষিত পানির মাছই ব্যাক্টেরিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।

জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ৭ ফুট পানির গভীরতা বিশিষ্ট এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে গ্রাম নেগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত মাছ রোগমুক্ত করতে ৫৬- ১৩২ গ্রাম / শতক/ফুট পানি (4 mg/l +Water demand-০.5- 7 mg/l) এই হারে অর্থাৎ এক বিঘার এরুপ পুকুরে ১৩.o-৩০.o কেজি পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।

potassium permanganate
মাছের ক্ষত রোগ (ইপিজুটিক আরসারেটিভ সিনড্রোম )

এ পরিমাণ পটাশ পুকুর বা জলাশয়ে দেয়া হলে পানি রঙ্গিন হবে তাতে সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ হবে বা সালোকসংশ্লেষণের হার কমে গিয়ে সবুজ প্লাংক্টন মারা যাবে। মৃত সবুজ প্লাংক্টন পচনের ফলে পুকুর বা জলাশয়ে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিবে এবং মাছ মারা যাবে।

তাছাড়া মাছের ফুলকা বন্ধ (block) হয়েও মাছ মারা যাবে। অধিকন্তু পরবর্তীতে মৃত সবুজ প্লাংক্টনের জন্য পচনশীল পদার্থ বৃদ্ধির কারনে পুকুর বা জলাশয়ে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে গ্রাম পজেটিভ ( gram positive) ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলতে আরও অধিক পরিমাণ পটাশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে যা কোন অবস্থাতেই বাস্তব সম্মত নয়।

সুতরাং মাছের ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগ নিরাময়ের জন্য পুকুর বা জলাশয়ে ব্যাপকভাবে পটাশ প্রয়োগ করার সিদ্ধান্তগ্রহণও একটি ভুল সিদ্ধান্ত।

মাছের ক্ষত সারাতে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর ব্যবহার

জাল টেনে পুকুর বা জলাশয়ের মাছ একত্র করে এই মাছে অল্প পরিমাণ পটাশ দিয়ে ধুয়ে দিলে সদ্য আঘাতপ্রাপ্ত বা সদ্য ক্ষত হওয়া মাছ সেরে উঠে। কারণ এই ক্ষত হওয়া মাছের ক্ষতের উপর পটাশ আবরণ ( Coating) তৈরি করে ফলে ক্ষত দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করতে পারে না বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে না।

এই জন্য মাছ ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত না হয়ে সেরে উঠে। কিন্তু মাছ একবার ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে তা উল্লেখিত ব্যবস্থায় সেরে তোলা যাবে না।

৫ মি.লি. গ্রাম/লি. হারে পটাশ মিশ্রিত পানিতে ২ মিনিট গোসল করালে রোগাক্রান্ত মাছ ভালো হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোসল করানোর সময় মাছের ফুলকা ( gill) বন্ধ (block) হয়ে না যায়।

তবে গ্রাম পজেটিভ ( gram positive) ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগাক্রান্ত মাছকে ২০-২৫ মি.লি. গ্রাম/লি. হারে পটাশ মিশ্রিত পানিতে ১ মিনিট গোসল করালে মাছের রোগ ভালো হবে।

পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর ব্যবহারে সতর্কতা

গোসল করানোর সময় মাছের ফুলকা যেন বন্ধ ( block) না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অর্থাৎ মাছের কানকুয়া ( Operculum) চেপে ধরে একটি একটি করে মাছকে গোসল করাতে হবে।

তথ্যসূত্র

2 comments on “মাছের রোগ নিয়ন্ত্রনে পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট ( KMnO4)

বসির আহম্মেদ

ধন্যবাদ স্যার!! খুব উপকার হলো।

Reply
মোঃ কমর উদ্দিন

আমি পটাশিয়াম সেল দিয়ে থাকি
01755026522

Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা