1 Answers
আলুর চাষে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, যা ফলনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। নিচে সাধারণ কিছু রোগ, তাদের লক্ষণ এবং প্রতিকার তুলে ধরা হলো:
১. দাগ রোগ (Early Blight)
লক্ষণ:
- পাতায় ছোট গোলাকার বা অনিয়মিত দাগ দেখা যায়।
- দাগের কেন্দ্র বাদামী বা ধূসর রঙের এবং চারপাশে হলদে আভা থাকে।
- রোগ বাড়লে পাতা শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার:
- রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করা।
- পর্যাপ্ত সেচ এবং সুষম সারের প্রয়োগ।
- ম্যানকোজেব বা ক্লোরোথ্যালোনিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ১০-১২ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করা।
২. আলুর পচন রোগ (Late Blight)
লক্ষণ:
- পাতার উপর পানির মতো কালো দাগ।
- কান্ডেও দাগ হতে পারে, এবং গাছ দ্রুত মরে যেতে পারে।
- আলুর কন্দে বাদামি রঙের পচন দেখা যায়।
প্রতিকার:
- আলু গাছকে বৃষ্টির পর দ্রুত শুকানোর ব্যবস্থা করা।
- রিডোমিল গোল্ড বা মেটালাক্সিল জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করা।
৩. ছত্রাকজনিত খরাদাহ (Fusarium Wilt)
লক্ষণ:
- গাছের কান্ড নরম হয়ে যায়।
- পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে মরে যায়।
- কন্দে ছত্রাকের প্রভাব পড়ে।
প্রতিকার:
- রোগমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত মাটি ব্যবহার।
- আলুর জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
- ক্যাপটান বা কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ।
৪. ভাইরাসজনিত রোগ (Leaf Roll, Mosaic Virus)
লক্ষণ:
- পাতা কুঁকড়ে যায় ও হলদেটে রঙ ধারণ করে।
- গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন কম হয়।
প্রতিকার:
- রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার।
- জমিতে ভাইরাস বহনকারী পোকা (যেমন এফিড) নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- ইমিডাক্লোপ্রিড বা অ্যাসিটামিপ্রিড স্প্রে করা।
৫. আলুর স্ক্যাব রোগ (Scab Disease)
লক্ষণ:
- আলুর কন্দে ছোট ছোট খসখসে দাগ।
- দাগ ধীরে ধীরে বড় হয় এবং আলুর গুণমান নষ্ট করে।
প্রতিকার:
- অ্যাসিডিক মাটিতে (পিএইচ ৫.২-৫.৮) চাষ করা।
- বোর্দো মিশ্রণ বা কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করা।
৬. আলুর গাঁট রোগ (Root Knot Nematode)
লক্ষণ:
- গাছ দুর্বল হয়ে যায়।
- শিকড়ে গাঁট তৈরি হয়।
- ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
প্রতিকার:
- সঠিক ফসলচক্র পালন।
- জমি আগাছামুক্ত রাখা।
- নিম তেল বা ক্যার্বোফুরান প্রয়োগ।
সাধারণ পরিচর্যা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা:
- রোগমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার।
- ফসলচক্র মেনে চাষ করা।
- জমি পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখা।
- রোগ দেখা দিলে দ্রুত রোগগ্রস্ত গাছ ধ্বংস করা।
- প্রয়োজনীয় সার ও সেচের সুষম প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
এভাবে আলুর চাষে রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব।