হাইড্রোপনিক ঘাস, পানিতে ঘাস চাষাবাদ। ঘাস, আমাদের চারপাশে মাটিতে আমরা পেয়ে থাকি। বিশেষ করে যেখানেই মাটি সেখানেই ঘাস। আর ঘাস যে গবাদিপশুর খাদ্য সে তো আমরা সবাই জানি। তবে আমরা কখনো ঘাসের নাম জানার চেষ্টা করি না। বর্তমানে সবচেয়ে বহুল পরিচিত ঘাস হচ্ছে ইপিল ইপিল, তবে এ ছাড়াও আরও ঘাস রয়েছে। যেমন হাইড্রোপনিক ঘাস। এধরনের ঘাস মাটি ছাড়া কেবল পানিতে চাষ হয়, সেকারনেই এই নামকরণ। আমাদের দেশে জনসংখ্যা একদিকে দিন দিন বাড়ছে, অন্যদিকে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবার এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর রয়েছে প্রচুর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা। যা মেটাতে ও মেধাবী জাতি গড়ে তুলতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ দুধ ও মাংস উৎপাদন ।
দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণে বা উৎপাদন করতে হলে গাভীর জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন হবেই। এক্ষেত্রে একটি বিষয় যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ খামারির ঘাস চাষের জন্য কোন জমি নেই। অনেক খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে চান না উর্বরতার ক্ষতি হতে পারে বা অর্থনৈতিক মুনাফা সহজে নেই বলে। কিন্তু তারা বুঝতে পরে না প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ওজনের একটি গাভীকে অন্তত দৈনিক ১৫ থেকে ২৫ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হয়। যেহেতু হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করার জন্য জমির প্রয়োজন হয় না তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে পারেন। এই ঘাসে দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। আবার এর উৎপাদন খরচও বেশি নয়, প্রতি কেজি ১.৫০-২.০০ টাকার বেশি খরচ হবে না।
হাইড্রোপনিক ঘাস কোথায় চাষ করবেন:
যেকোন সুবিধাজনক জায়গা যেমন- ঘরের ভেতরে, নেটহাউস, ঘরের ছাদ, প্লাস্টিকের বালতি, পানির টানেল, বারান্দা, কিংবা কোন খোলাজায়গায়, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি।
হাইড্রোপনিক ঘাস চাষে কি প্রয়োজন :
খেসারি, মাষকলাই, গম, ছোলা, ভুট্টা, সয়াবিন, এবং বার্লি ইত্যাদির বীজ।
হাইড্রোপনিক ঘাস কিভাবে চাষ করবেন:
প্রথমত বীজকে অন্তত ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
এরপর বীজ থেকে পানি ঝরিয়ে ভেজা চটের বস্তা বা কালো সুতির কাপড়ে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার স্থানে রেখে দিতে হবে।
তার পর একটি কাঠ, টিন বা প্লাস্টিকের ট্রে যেটাতে একপাশে ছিদ্র থাকে তাতে ওই বীজ বিছিয়ে কালো কাপড় দিয়ে ২ দিন এমনভাবে ঢেকে রাখতে হবে, যেন বাইরের আলো-বাতাস না লাগে। মনে রাখা দরকার যে কাপড় সারাক্ষণ ভেজা রাখতে হবে।
৩য় দিনে কালো কাপড়খানা সরাতে হবে এবং খোলা রেখে আধা ঘণ্টা পর পর পানি ছিটিতে হবে। বাঁশ বা কাঠের তাক বানিয়ে ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে।
প্রায় ১০ দিন পর কাচা ঘাস পাওয়া যাবে। এর পরিমাণ হবে প্রায় ৭ থেকে ৮ কেজি। যে ঘাস উৎপাদন হতে লাগে ৫ বিঘা জমি, তা মাত্র ৩০০ বর্গফুট টিন শেড ঘরেই এখন উৎপাদন করা সম্ভব।
হাইড্রোপনিক ঘাসের উপকারিতাঃ
১/এতে সবুজ ঘাস উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
২/খুবই অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়, তাই অল্প পরিসরে অধিক ঘাস উৎপাদন করা যায়।
৩/ এটি আশঁ জাতীয় খাবারের চাহিদা পূরণ করতে পারে। খাদ্যের শতকরা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ভাগই হাইড্রোপনিক ঘাস খাওয়ালে এক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে এতে ১০ থেকে ১৫ ভাগ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে দুধের ফ্যাটও এস এন এফ শতকরা ০.৩ থেকে ০.৫ ভাগ বেড়ে যায়।
৪/এ ঘাস সহজে হজমযোগ্য, শতকরা ৯০ ভাগই হজমযোগ্য। অন্যদিকে এই বীজের দানাদার খাবার মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ হজমযোগ্য।
৫/ এর উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব এবং কোন রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই।
৬/ দানাদার খাবারের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি পরিমাণের ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি রয়েছে এই ঘাসে।
৭/ভিটামিন ই সেলিনিয়াম, ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে তাই গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি পায় এ ঘাসে ।
৮/ দেখা গেছে শতকরা ২৫ ভাগের অধিক ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
৯/এটা গবাদি পশুর জন্য পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে, আমিষ, নানাবিধ ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস এটি।
১০/সারা বছরই চাষ করা যায় এবং এতে মাটিবাহিত কোন রোগ হবে না।কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না কারণ কীটপতঙ্গ আক্রমণের সম্ভাবনা নেই।
১১/ দানাদার খাবারের ফাইটিক এসিড যাকে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাকটস বলাহয় সেটাকে দূরীভূত করে শরীরের ইমিউনিটি ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
১২/ এটা যেকোন পরিসরে পরিকল্পিতভাবে চাষ করা যায় (ছোট/বড়)।
১৩/এটি অনেক লাভজনক ও মানসম্পূর্ণ ফসল।
১৪/ এই ঘাস অধিক পরিপাচ্য ও রসালো হওয়ার কারণে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এবং এটি অধিক পরিবেশ উপযোগী।
মাছ চাষে বিনিয়োগ করতে আমাদের বাস্তব জ্ঞানের ভিত্তিতে লেখা মাছ চাষ বিষয়ক অনুচ্ছেদ গুলো পড়লে মাছ চাষে আপনার টেকনিক্যাল জ্ঞান বৃদ্ধি ও লাভবান হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
Md. Mehedi Hasan
October 4, 2021 at 5:46 pmসাদা ছত্রাকের আক্রমন থেকে বাচার উপায় কি? জানালে উপকৃত হতাম।
মোঃ মনির
July 14, 2020 at 12:49 amহাইড্রোপনিক ঘাসঃ গাভীর দুধ ও মাংস উৎপাদনে সহযোগিতা করে। উপকারী লেখা