
বাংলাদেশের কৃষিপ্রধান অর্থনীতিতে গবাদিপশু (গরু বা ছাগল) একটি অমূল্য সম্পদ। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মানুষ যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে, তেমনি গবাদিপশুও নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে পুষ্টিহীনতা, নিউমোনিয়া এবং খুরা রোগের প্রকোপ এ সময় বেড়ে যায়।
শীতের এই সময়ে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে এবং রোগমুক্ত রাখতে খামারি ভাইদের কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. আরামদায়ক ও উষ্ণ বাসস্থান
শীতের ঠান্ডা হাওয়া সরাসরি পশুর গায়ে লাগলে তারা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চটের পর্দা: গোয়ালঘরের জানালা বা খোলা অংশে চটের বস্তা বা মোটা কাপড়ের পর্দা টাঙিয়ে দিতে হবে যাতে ঠান্ডা বাতাস ভেতরে ঢুকতে না পারে। তবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন চলাচলের জন্য ওপরের দিকে সামান্য অংশ খোলা রাখা ভালো।
শুকনো বিছানা: মেঝেতে খড় বা শুকনো ছাই বিছিয়ে দিতে হবে যাতে পশু সরাসরি ঠান্ডা মেঝের সংস্পর্শে না আসে। প্রতিদিন এই বিছানা পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।
২. সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পানি ব্যবস্থাপনা
শীতকালে পশুর শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়।
কুসুম গরম পানি: গবাদিপশুকে কোনোভাবেই খুব ঠান্ডা পানি খাওয়ানো যাবে না। এতে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে। সামান্য উষ্ণ বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাতে হবে।
দানাদার খাদ্য ও চিটাগুড়: খাবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ দানাদার খাদ্য এবং ক্যালরির জন্য সামান্য পরিমাণ চিটাগুড় মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
কাঁচা ঘাস: শীতকালে ঘাস কম পাওয়া যায়, তাই সাইলেজ বা খড়ের পাশাপাশি সম্ভব হলে উন্নত জাতের কাঁচা ঘাস (যেমন- নেপিয়ার, জার্মান) খাওয়াতে হবে।
৩. রোগবালাই প্রতিরোধ ও টিকা প্রদান
শীতকালে গবাদিপশুর প্রধান শত্রু হলো খুরা রোগ (FMD), তড়কা এবং নিউমোনিয়া।
টিকাদান: শীত শুরু হওয়ার আগেই খুরা রোগের টিকা দিয়ে দেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি আগে দেওয়া না থাকে, তবে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীরের যত্ন: রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পশুকে কিছুক্ষণ রোদে রাখতে হবে। তবে মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে বাইরে বের না করাই ভালো।
পরিচ্ছন্নতা: গবাদিপশুর শরীর মাঝেমধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে মুছে দেওয়া যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি বেশিক্ষণ গায়ে না থাকে।
৪. বাছুরের বিশেষ যত্ন
বড় পশুর চেয়ে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাছুরকে রাতে আলাদা উষ্ণ স্থানে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে বাছুরের শরীরে চটের বস্তা দিয়ে জামার মতো বানিয়ে পরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
খামারিদের জন্য পরামর্শ
গবাদিপশু অসুস্থ হওয়ার লক্ষণ (যেমন- নাক দিয়ে জল পড়া, খাওয়া বন্ধ করা বা শরীর কাঁপা) দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে সচেতনতা ও যত্ন আপনার খামারকে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

