পাবনা জেলায় দুশ্চিন্তায় মূলকাটা পেঁয়াজ চাষিরা দিন কাটাচ্ছেন অনেকটা অনিশ্চয়তায়। আশা-দূরাশায় দিন পার করছেন তারা। তবে পেঁয়াজের বাজার ভালো থাকায় একটু আলোর মুখ দেখছেন। আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বাজারে উঠবে। এর অন্য নাম কন্দ পেঁয়াজ। ইতিমধ্যেই কয়েকজন আগাম চাষি মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজ বাজারে তুলেছেন। বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন তারা। তবে কোন কারণে পেয়াজের দাম কমে গেলে তারা লোকসানের মুখ দেখবেন। আর তাই দুশ্চিন্তায় মুলকাটা পেঁয়াজ চাষিরা দিন কাটাচ্ছেন কিছুটা অনিশ্চয়তায়।
বাজারে পেঁয়াজ উঠলে দাম কমে যাবার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা
চাষিরা এখন মুড়ি পেঁয়াজের যত্ন পরিচর্যা নিয়ে মহাব্যস্ত।
মুড়ি পেঁয়াজ পুরাদমে বাজারে উঠেলে দাম পড়ে যেতে পারে।
অথবা সরকার আবার পেঁয়াজ আমদানি করে কি না এ নিয়ে চাষিরা চিন্তিত।
চাষিরা জানিয়েছেন পেঁয়াজ আমাদানি করলে ক্ষতির শিকার হতে হবে তাদের।
পাবনা জেলাকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, জেলায় এবছর ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ চাষের।
এর বীপরিতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাষিরা এবার মৌসুমের শেষে এসে পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন।
যার ফলে কৃষকেরা পেঁয়াজ চাষে এবার আরও বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
এবছর কৃষি বিভাগ আশা করছে পাবনায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন হয়।
পাবনা জেলা থেকেই প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়।
এটি সারাদেশের মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশ।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টন উৎপাদন হয়।
জেলায় চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করেন
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দুটি পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন।
এর একটি কন্দ ও অন্যটি চারা পদ্ধতিতে।
মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।
অন্যদিকে হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে চাষ শুরু হয়।
গত শুক্রবার পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপেজলায় গিয়ে দেখা যায় পেঁয়াজ চাষে মহাব্যস্ত কৃষকরা।
বিশেষ করে বিল গ্যারকাপাড়, বিল গাজনা পাড়, কুমিরগাড়ী, বামনডাঙ্গা, বামনদি, ইসলামপুর প্রভৃতি অঞ্চলে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে বেশি।
দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়ার বনগ্রাম হাট।
গত শনিবার সকালে এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন পেঁয়াজ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০০ হাজার থেকে ২২০০ টাকা দরে।
এদিকে কন্দ পিঁয়াজ এখনও তেমনভাবে উঠতে শুরু করেনি।
কয়েকজন কৃষক আগাম চাষ করা পেঁয়াজ বাজারে এনেছেন।
দেখা যায় নতুন পেঁয়াজও প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা দরে।
পাবনার দোতলা কৃষির উদ্ভাবক কৃষিবিদ জাফর সাদেক।
তিনি জানান, বছরের শেষ দিকে প্রায় সময়ই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
তবে সাধারণ চাষিরা সে দাম পান না।
এর কারণ হিসেবে চাষের খরচজনিত দেনার কারণে মৌসুমের শুরুতেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়।
ফলে খুব কম দামে তারা তাদের পেঁয়াজ বিক্রয় করে ফেলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় পেঁয়াজ েএর ফলন ভালো হবে বলে তারা আশা করছেন।
কৃষির মাঠকর্মীরা চাষিদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন বলেও তিনি জানান।
তবে এবারও তারা পূর্বের নায্য দাম পাবেন বলে তারা আশাবাদী।