মাছ চাষে তাপমাত্রা একটি গুরত্বপূর্ন ফ্যাক্টর। তাপমাত্রা কমে গেলে যেমন ঠান্ডায় মাছের বৃদ্ধি কমে যায় তেমন অতিরিক্ত বা তীব্র গরমে মাছ ও চিংড়ি মাছের পুকুরে বা জলাশয়ে সৃষ্টি হয় অনেক সমস্যা।
তীব্র গরমে মাছ ও চিংড়ি পুকুরের পরিচর্যা নিয়ে আজকের আলোচনা।
অধিক তাপমাত্রায় মাছ/ চিংড়ির পুকুরের ক্ষতিকর দিক:
১. পানিতে অক্সিজেনের (O2) মাত্রা কমে যাবে।
২. পানিতে এ্যামোনিয়া (ঘঐ৩) গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
৩. পানির পিএইচ (ঢ়ঐ) এর ভারসাম্য হারাবে।
৪. পানি অতিরিক্ত গরম হয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য (ফাইটোপ্লাঙ্কটন এবং জুওপ্লাঙ্কটন) মারা যাবে।
৫. মাছ / চিংড়ি দূর্বল হয়ে পড়বে, ফলে চলাফেরার গতি হ্রাস পাবে।
৬. মাছ / চিংড়ির হযম শক্তি কমে যাবে, ফলে খাদ্য কম গ্রহন করবে।
৭. অতিরিক্ত তাপমাত্রায় পানিতে জৈব পদার্থ বেড়ে বিভিন্ন পরজীবী এবং ক্ষতিকর অনুজীব জন্মায়।
৮. মাছের গায়ে লাল লাল দাগ দেখা দিতে পারে এবং মাছ মারা যেতে পারে।
৯. অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মাছের শ্লেষ্মা কমে গিয়ে শরীর খসখসে হয়ে যায়, ফলে মাছ দ্রুত ক্ষতিকর পরজীবী ও অনুজীব দ্বারা আক্রান্ত হবে।
অধিক তাপমাত্রা থেকে মাছ/ চিংড়িকে বাঁচাতে করণীয়:
১. পুকুরে পানির গভীরতা কমপক্ষে ৫ ফুট রাখতে হবে।
২. পুকুরের ১০ শতাংশ জায়গা বাঁশ দিয়ে ঘিরে তাতে কচুরীপানা অথবা নারিকেলের ডাল অথবা কলা পাতা দিয়ে পানি ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে যাতে মাছ ঠান্ডা পানিতে থাকতে পারে।
৩. দুপুর বেলা (১২ টা থেকে ৩ টা) গভীর নলকূপ থেকে পুকুরে পানি সরবরাহ করে পানির গভীরতা বৃদ্ধি এবং পানি ঠান্ডা রাখা য়েতে পারে।
৪. সকাল বেলায় শতকে ২০০-২৫০ গ্রাম লবন অখবা ১০০ গ্রাম ভেট স্যালাইন পানিতে দেয়া যেতে পারে।
৫. দুপুর বেলা এবং রাতের বেলা এরেটর/ব্লোয়ার মেশিন চালিয়ে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, অথবা শতকে ১০-১২ গ্রাম করে অক্সিজেন ট্যাবলেট দেয়া যেতে পারে।
৬. পুকরের পানি স্বাভাবিক ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত খাবার সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে, প্রয়োজনে খাবার বন্ধ রাখতে হবে। সকালে বা সন্ধার পরে অল্প খাবার দেয়া য়েতে পারে।
৭. তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাবারের সাথে ভিটামিন-সি (২-৩ গ্রাম/কেজি খাদ্য) মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
৮. দিনের বেলা পোনা স্থানান্তর বন্ধ রাখতে হবে বা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হবে।
অধিক তাপমাত্রায় মাছের রেনু / নার্সারী পুকুরের জন্য করনীয়:
১. রেনু / পোনা সকালে বা সন্ধায় ছাড়তে হবে। অর্থাৎ ঠান্ডা পরিবেশে ছাড়তে হবে।
২. ছাড়ার সময় রেনু / পোনা গ্লুকোজ পানিতে কিছু সময় রেখে তারপর পুকুরে ছাড়া যেতে পারে।
৩. রেনু / পোনার পুকুরে তুলনামূলক কম খাবার দিতে হবে।
৪. রেনু / পোনার পুকুরে কচুরিপানা/ নারিকেল পাতা/ কলাপাতা দিয়ে আশ্রয়স্থল করে দিতে হবে, যাতে অধিক তাপমাত্রায় রেনু / পোনা অশ্রয় নিতে পারে।
৫. তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেনু / পোনার খাবারের সাথে ভিটামিন-সি খাওয়াতে হবে।