দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদী বলেশ্বর নদী। ইলিশের পঞ্চম প্রজননক্ষেত্র বলেশ্বর নদী ও নদীর মোহনা অঞ্চলকে করা হবে। নদী ও নদী মোহনার ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৪৮ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে ইলিশের পঞ্চম প্রজননক্ষেত্র করার প্রস্তাব এসেছে। ইলিশের ৫ম প্রজননক্ষেত্র হিসেবে বলেশ্বর নদীর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
ইলিশের পঞ্চম প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে বলেশ্বর নদী চিহ্নিত হবে
বিএফআরআইয়ের বাস্তবায়নাধীন ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় একটি কর্মশালায় এ প্রস্তাব করা হয়।
বলেশ্বর নদীতে ইলিশের প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণবিষয়ক এক অংশীজন কর্মশালায় এ প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রজননক্ষেত্রের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রস্তাবিত অঞ্চলকে প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার মধ্যমে দেশে ইলিশের পঞ্চম প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত হবে।
এর ফলে সর্বমোট ৭ হাজার ৩৪৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ অবাধে প্রজননের সুযোগ পাওয়া যাবে।
প্রস্তাবিত প্রজননক্ষেত্র এলাকা সম্পর্কে বিএফআরআই জানায়, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার বগী বন্দর থেকে শরণখোলা উপজেলার পক্ষীর চরসংলগ্ন পয়েন্ট পর্যন্ত।
সেই সাথে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা থেকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নের লেবুর বাগান পয়েন্ট পর্যন্ত।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা এই প্রজনন এলাকা নির্ধারণ করেছেন গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করে।
আশা করা হচ্ছে নতুন এ প্রজননক্ষেত্র জাটকা ও প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ এবং অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।
এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এতে প্রায় সব মৌসুমে দেশে বিভিন্ন বয়সের ও আকারের ইলিশ পাওয়া যাবে।
একসময় হারিয়ে যেতে বসেছিল ইলিশ
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, দেশে মৎস্য উৎপাদন শূন্য থেকে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একসময় আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে নতুন প্রজন্ম ইলিশজাতীয় মাছ চিনতে পারবে কিনা।
হয়তো তাদের বলতে হবে তার গায়ের রং এমন ছিল, স্বাদ এমন ছিল ইত্যাদি।
এমনকি একটা সময় একেবারেই ইলিশ হারিয়ে যাচ্ছিল।
সে জায়গা থেকে ইলিশের উৎপাদন আজ এমন জায়গায় আনা হয়েছে।
বিজ্ঞানসম্মতভাবে সাত লাখ মেট্রিক টন আহরণের পর আরও দেড় লাখ টন ইলিশ আহরণ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন,যতক্ষণ নদীতে মাছ আছে, ততক্ষণ আমরা সব মাছ তুলে ফেলব এমন একটা প্রবণতা সকলের মাঝে কাজ করেন।
মৎস্য খাতে এ ধরণের ধারণা খুব ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নদী বা জলাশয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ থাকতে হবে বলে মন্ত্রী মনে করেন।
নদী থেকে তোলা মাছের পরিমাণের একটি বিজ্ঞানসম্মত অভিজ্ঞতা ও রিপোর্ট রয়েছে।
তাই সার্বক্ষণিক যদি মৎস্য আহরণ করা হয় তাহলে একসময় কোনো মাছ থাকবে না।
তিনি আরও জানান যে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকার সময় মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হচ্ছে।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, মৎস্য আহরণের সময় এবং মৎস্য আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ করা হয়।
এটি নির্ধারণের জন্য রয়েছে একটি যৌক্তিক, গবেষণালব্ধ ও বাস্তবসম্মত কারণ।
সরকার মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকার সময় মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ দেয়াসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে বিশাল সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদসহ অন্যান্য সম্পদ রক্ষার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ আইন মৎস্যজীবী-জেলেদের সাজা দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এমনটি নয় যোগ করে তিনি বলেন যেন দেশের অভ্যন্তরীণ মৎস সম্পদ বিদেশে পাচার হতে না পারে।