Monday, 25 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

খেজুর গাছ থেকে রস হবে, আগের তুলনায় অনেক বেশি


বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোর। এ জেলায় রয়েছে বাংলাদেশের অনেক গুলো বিখ্যাত জিনিস এবং ব্যাক্তিত্ব। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত খেজুরের গুড়, খেজুরের রস। সময় পরিক্রমায় ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু সেটা পুনরুদ্ধার হবার একটা সম্ভাবনা হয়ত এবার দেখা যাচ্ছে। গবেষনায় মিলল খেজুর গাছ থেকে রস হবে আগের তুলনায় বেশি।

ফুলের মেলা, নকশী কাঁথা, খেজুর গুড়ের জেলা যশোর জেলা। হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য। ঐতিহ্য ধরে রাখতে সৈয়দ নাকীব মাহমুদ নিজ উদ্যোগে গত আট বছর যাবত গবেষণা করেছেন ।

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খেজুর গাছের বীজ সংগ্রহ করেন। বিশেষ করে  যশোরের বিভিন্ন অঞ্চল, বরিশাল ও গাজীপুর থেকে প্রচুর ভালো রস পাওয়া যায় এমন গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আনেন। এরপর সেই বীজ থেকে চারা উতপন্ন করে নিজের জমিতে আট হাজার খেজুরের চারা উৎপাদন করেন।

আরো পড়ুন
পান চাষ পদ্ধতি

পান চাষ একটি লাভজনক কৃষি পদ্ধতি, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশে এটি ব্যাপক চাষ করা হয়। Read more

মিঠা জাতের পান চাষে লাভবান কৃষক

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ফুলের ঘাট এলাকার পান চাষের এই চিত্র সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। পান চাষ একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এটি ক্রমশ Read more

নতুন জাতের প্রতিটি খেঁজুর গাছ থেকে মৌসুমে গড়ে দুই দিনে ১৬ লিটার পর্যন্ত রস মিলছে।

পেশায় একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী সৈয়দ নাকীব মাহমুদ। আগে তিনি রেমেক্স করপোরেশনে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে পরিচালক হিসেবে কাশেম স্টিলে কর্মরত আছেন।

যশোরের কেশবপুরে গত মঙ্গলবার দেশীয় উন্নত জাতের সেই চারা রোপণ করা হয়। রোপণ করেছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

যশোর জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ জিয়াউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান, কেশবপুরের ইউএনও এম এম আরাফাত হোসেন এ সময় গবেষক সৈয়দ নাকীব মাহমুদ এর সাথে উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘নানা কারণে যশোরের ঐতিহ্য খেজুরের গুড় ও পাটালির সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছি, সৈয়দ নাকীবের মাধ্যমে আমরা আজ এখানে চারা রোপণ করলাম।’

কেশবপুরের ইউএনও এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, ‘উন্নত জাতের এ চারা রোপণের মাধ্যমে কেশবপুরে খেজুরের রসের ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে।’

সৈয়দ নাকীব মাহমুদ বলেন, ‘যশোরে খেজুরের গুড় ও পাটালিই নয়, বরং একসময় চিনিও উৎপন্ন করা হতো। রস ও গাছী (খেজুরগাছ থেকে যারা রস সংগ্রহ করেন যারা) কমে যাওয়ায় ইট ভাটা ও অন্যান্য জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ বিক্রি করে দেয়া হয়। এতে এ অঞ্চলে খেজুরের রস ও গুড় কমে যায়, খেজুরের রস থেকে চিনি উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়।

‘এটা দেখে আমার কষ্ট লাগে। আট বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে খেজুরের আট জাতের খোঁজ পাই, সেসব গাছ প্রচুর রস দিয়ে থাকে। বর্তমানে গাছগুলোতে দুই-তিন লিটারের বেশি রস পাওয়া যায় না, কিন্তু নতুন এই জাতের গাছ থেকে গড়ে দুই দিনে ১৬ লিটার পর্যন্ত রস পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘এসব গাছ থেকে গাছীরা অধিক পরিমাণে রস সংগ্রহ করতে পারবেন, এ থেকে খেজুরের গুড়ও বেশি পরিমাণে পাওয়া যাবে।’

সৈয়দ নাকীব আরও একটি আশাবাদের কথা জানালেন। তিনি বলেন,‘গাছীরা সাধারণত দিনে ১৫টির বেশি গাছে উঠতে পারেন না। আমরা গাছে ওঠার একটি যন্ত্র তৈরির শেষ প্রান্তে আছি। যন্ত্রটি দিয়ে কৃষকের গাছে উঠতে কষ্ট হবে না, তারা আরও বেশি পরিমাণে গাছে উঠতে পারবেন।’

0 comments on “খেজুর গাছ থেকে রস হবে, আগের তুলনায় অনেক বেশি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *