
রপ্তানির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর অবশেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) মন্ত্রণালয় থেকে আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এই সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে, যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের অনুমোদিত চাল রপ্তানি করতে পারবে। তাদের আগের সময়সীমা ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।
অনুমোদনের বিস্তারিত ও কঠোর শর্ত
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর দুই দফায় মোট ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। নতুন করে সময়সীমা বৃদ্ধি পাওয়া এই ৫০টি প্রতিষ্ঠান ছিল ৮ এপ্রিল অনুমতিপ্রাপ্ত ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত। এই ৫০টি প্রতিষ্ঠান মিলে মোট ২৩ হাজার ৯৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারবে।
রপ্তানির প্রধান শর্তসমূহ:
- ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য: প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য কমপক্ষে ১.৬০ মার্কিন ডলার হতে হবে। (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৯৫ টাকা।)
- পরিমাণ সীমাবদ্ধতা: অনুমোদিত পরিমাণের বেশি চাল রপ্তানি করা যাবে না।
- অহস্তান্তরযোগ্য: রপ্তানির অনুমোদন কোনোভাবেই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা বা সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া যাবে না। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকেই নিজে রপ্তানি করতে হবে।
- কাগজপত্র জমা: প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি করতে না পারা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে এক মাস পর এই সময় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলো। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ১০০ থেকে ৫০০ টনের মধ্যে চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সুগন্ধি চাল রপ্তানি ও বৈশ্বিক বাজার
রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সাধারণত চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে, সরকারের বিশেষ অনুমতি নিয়ে কেবল সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক রপ্তানি চিত্র (ইপিবি তথ্যমতে):
| অর্থবছর | সুগন্ধি চাল রপ্তানি আয় (ডলার) |
| ২০১৯-২০ | ২৮ লাখ ৮০ হাজার |
| ২০২০-২১ | ২০ লাখ ৬০ হাজার |
| ২০২১-২২ | ১০ লাখ ৭০ হাজার |
| ২০২২-২৩ | অনুমতি স্থগিত (রপ্তানি বন্ধ) |
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়। দেশে বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয় এবং গড়ে ১০ হাজার টন রপ্তানি হয়।
এই চাল মূলত যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউএই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৩০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়।
রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের তালিকা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত সুগন্ধি চালের মধ্যে রয়েছে:
কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসী মালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।

