গরুর একটি ব্যাধি লাম্পিস্কিন (Lumpy Skin Disease) রোগ।এ রোগে ষাড়ের সারা গায়ে গুটি গুটি দেখা দেয় এবং ওজন কমতে শুরু করে। দু:সংবাদ বা দুর্যোগ যেন পিছুই ছাড়ছে না। একের পর এক লেগেই আছে। একদিকে করোনা, তো অন্যদিকে আম্ফান, তার সাথে মানুষের অপরাধপ্রবণতা তো আছেই। এর সাথে সাথে যোগ হল আরও একটি ব্যাধি লাম্পিস্কিন। সারাদেশে গবাদিপশুর মাঝে দেখা দিচ্ছে লাম্পি স্কিন রোগ। যার দরুন মাথায় হাত দিয়েছে কৃষক ও গরু ব্যবসায়ীগণ। বিভিন্ন খন্ড খন্ড স্থানে এমনকি এলাকাগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে আসন্ন কোরবানি ঈদ নিয়ে।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গিয়ে দেখা যায় গবাদিপশুরা আক্রান্ত হচ্ছে লাম্পিস্কিন রোগে। স্থানীয় পশু ডাক্তার বা প্রাণিসম্পদ অফিস কেউই দিতে পারছে না সমাধান। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি ও পশুর মালিকেরা।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ (Lumpy Skin Disease): কারণ, লক্ষণ
কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার ঢেকিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানান তার ষাড়ের সারা গায়ে গুটি গুটি দেখা দিলেও তিনি প্রথমে নজর দেননি। কিন্তু ষাড়টি ক্রমাগত খাওয়া দাওয়া কমে গেলে ও ওজন কমতে থাকায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে ৩৭ হাজার টাকায় কসাইয়ের কাছে বিক্রয় করে দেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান প্রতিদিনেই লোকজন গবাদিপশু নিয়ে আসছে। প্রায় সকলেই একই সমস্যা নিয়ে আসছে। তার হিসাব মতে গত নভেম্বর থেকে ২৩শে জুন অবধি প্রায় তিন শতাধিক গরু এরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।
হোসেনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৬০ হাজারের অধিক গবাদিপশু থাকলেও সরকারি ভাবে একহাজার পশুকেই টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে।
এই অবস্থা কোন কোন জায়গায় অনেক ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। ঠাকুরগাও অঞ্চলে গত ২৪ ঘন্টায় এ রোগে অন্তত ২০ টি গরুর মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা যায়। জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের সূত্রঅনুসারে এ পর্যন্ত জেলায় ২২০০ গরু লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে যার মধ্যে ১৮০০ গরু চিকিৎসা পেয়েছে, টিকা দেয়া হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার গরুকে।
লাম্পি রোগের (Lumpy Skin Disease) চিকিৎসা
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে এই বিরল ভাইরাস খুব দ্রুত গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই রোগের নাম লাম্পি স্কিন ডিজিস। ঠাকুরগাও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। তবে গোটপক্স ভ্যাক্সিন প্রয়োগে তারা ফল পাচ্ছেন। তাছাড়া লক্ষণ অনুযায়ী এন্টিহিস্টামিন, সোডা প্যারাসিটামল ইত্যাদি দিচ্ছেন তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এর বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায়, লাম্পিস্কিন একটি আর এন এ ভাইরাস জনিত রোগ। বাংলাদেশে এ রোগ নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গত অক্টোবরে ভারত হয়ে আফ্রিকান এই ভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা এখন ব্যাপক আকারে সংক্রামিত হচ্ছে। এ রোগ মশা-মাছি, আঠালি, ব্যবহৃত নিডেল-সিরিঞ্জ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। লক্ষণ হিসেবে পশুর গায়ে গুটি গুটির সৃষ্টি হয়। পরে এসব গুটি ফেটে গিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ঘা তৈরি করে। পশু দুর্বল হয়ে পড়ে ও ওজন কমে যায়। চামড়ার নিচে পচন ধরে ও চামড়ার গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে থাকে এবং একসময় প্রাণীটি মারা যায়।
এদিকে আসন্ন কোরবানির ঈদ কে সামনে রেখে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে গরু খামারী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। ময়মনসিংহ জেলার কিছু কিছু অংশে সামাজিক ভাবে কোরবানি স্থগিত রাখার সাময়িক সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। অন্যদিকে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন যে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা তাদের সংগ্রহে নেই। খামারী ও গরু ব্যবসায়ীরা তাই জোর দাবী জানাচ্ছেন যেন বিনামূল্যে গবাদিপশুর টিকার ব্যবস্থা করা হয়। তারা জানান এমনিতেই ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আসার কারণে প্রতিবছর তারা প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হিমশিম খান। তার উপর এ বছর এরকম সংক্রমণে তারা আশংকা করছেন তারা অনেক বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবেন। তাই তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ ছাড়া উন্নত গাভির খামার ব্যবস্থাপনা জানতে পড়ুন উন্নত জাতের গাভির খামার ব্যবস্থাপনা।