রেশমের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে চায় সরকার। তাই সরকার দেশের ৩০ জেলার ৪২ উপজেলায় রেশম শিল্পের সম্প্রসারণ চায়। রেশমের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে রেশম শিল্পের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প নিয়েছে। প্রকল্পটি ৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করবে রেশম উন্নয়ন বোর্ড।
এ তথ্য জানা যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেশম শিল্প।
রেশম শিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখ চাষি জড়িত। এদের মধ্যে রেশম গুটি উৎপাদক রয়েছে এক লাখ।
চলতি বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা সরকারি অর্থায়নে হওয়া প্রকল্পটি।
রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক শ্যাম কিশোর রায়।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে রেশম চাষ ও শিল্পের সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন হবে।
পাশাপাশি উৎপাদন বাড়বে গুণগতমান সম্পন্ন রেশম গুটি ও রেশম সুতার।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ লোকের অভাব আছেএ সেক্টরে।
এই প্রকল্পের কারণে রেশম চাষ ও শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
যার মাধ্যমে রেশম সেক্টরে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এছাড়া বেকার জনগোষ্ঠী ও নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ফলে দারিদ্র্য বিমোচন হবে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রকল্পটির ওপর মূল্যায়ন সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়।
কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
রেশম বোর্ড জানিয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানাধীন রেশম কারখানা রয়েছে প্রায় ৮০টি।
ছোট ও মাঝারি এ সকল কারখানাগুলো এখনো এ শিল্পের কাঁচামালের সিংহভাগ আমদানি করে।
বার্ষিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রায় ৫শ মেট্রিক টন কাঁচা রেশম আমদানি করা হয় ।
চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে পূরণ করা যায়।
রেশমের স্থানীয় ভাবে চাহিদা পূরণ করতে হবে
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন রেশম শিল্পের বিপ্লব ঘটাতে স্থানীয়ভাবে রেশমের চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই বলে।
রেশম শিল্পের উন্নয়নে একই প্রকল্প এর আগেও নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি এর আলোকে নেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় সংশোধিত এই প্রকল্পটির সমাপ্তি মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে আইএমইডি।
প্রকল্পের ডিপিপি হয়েছে বলে প্রকল্পটির পরিচালক মৌসুমী জাহান কান্তা জানান।
এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলেও তিনি জানান।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানান, হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও নারীদের রেশম চাষে সম্পৃক্তকরণ করা হবে।
তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান তারা প্রকল্পটির মাধ্যমে।
দেশে তুঁত চাষ বাড়ানো ও বাণিজ্যিকভিত্তিতে রেশমের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
আর এ কারণে ফার্মিং পদ্ধতিতে রেশম চাষ সম্প্রসারণ করাও প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
এক সময় রেশম সুতা থেকে শুধু শাড়ি তৈরি হত।
কিন্তু এখন পণ্যের বৈচিত্র্য ও ডিজাইনের বিস্তৃতি ঘটেছে।
সব বয়সী ও শ্রেণির মানুষের পরার উপযোগী নানা ধরনের রেশম বস্ত্র তৈরি হচ্ছে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও ও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় এসব পণ্য তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া রেশম চাষ পার্বত্য চট্টগ্রামেও পৌঁছে গেছে।
জি-আই সনদ পেয়েছে রাজশাহীর সিল্ক
দেশের সিংহভাগ রেশমপণ্য রাজশাহীতেই উৎপাদিত হয়।
রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সদর দপ্তর অবস্থিত এই অঞ্চলে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী একটি ঐতিহ্যের নাম হয়ে উঠেছে রাজশাহীর শিল্ক।
এই বছরের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ক বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবসে জিআই পণ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খান।
তিনি বলেন, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৩০টি জেলার ৪২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশি সিল্কের বাজার পরিধি বাড়বে। একই সাথে এর চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি বিশ্ববাজারে পণ্যটি ঐতিহ্যের অঙ্গ হয়ে উঠবে।