সুইট লেমন টক-মিষ্টি জাতীয় ফল এবং এর খোসাও সুস্বাদু ও রুচি বর্ধনকারী। সুইট লেমন সাইট্রাস জাতীয় একটি নতুন ফল। এই ফলটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বল্প পরিসরে ৩-৪ বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে। এটি একটি বনসাই জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো- Citrus limetta. গাছটি লম্বায় প্রায় ২-২.৫ ফুট এবং খানিকটা ঝপালো হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেকেই ছাদ বাগান করে থাকে। ছাদ বাগানে লাগানোর জন্য সুইট লেমন খুবই উপযুক্ত একটি গাছ।
সুইট লেমন গাছের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যে
সুইট লেমন গাছে সারা বছর থোকায় থোকায় ফল ধরে থাকে। একটি গাছে প্রায় ২০০-২৫০ টি ফল ধরে থাকে। দুই বছর বয়সের একটি গাছ থেকে প্রায় ৫-৬ কেজি ফল পাওয়া যায়। গাছটির ফল ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলও বেশি ধরবে। অর্থাৎ গাছে পাতার থেকে ফলই বেশি ধরে।
লেমন মানে লেবু এ ফলটি দেখতে লেবুর মতোই। তবে এটি মিষ্টি লেবু। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে এবং পাকলে হলুদ হয়ে যায়। একেবারে মাল্টার কালারের মতো। এই লেবুতে এসিডের পরিমাণ কম থাকে।
সুইট লেমনের ব্যবহার:
সুইট লেমনের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এর খোসা বা বাকল খেতে। তবে ভিতরের অংশটাও খায়। ভিতরের অংশটার স্বাদ হালকা টক মাল্টা বা কমলার মতো অনেকটা। এছাড়াও অনেক সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে Soft Drinks এর alternative হিসেবে কাজ করে এটি।
এটি ত্বকের সৌন্দয্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই ফল ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী। নিয়মিত এ ফলের জুস খেলে সঠিকভাবে শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মিষ্টি লেবু ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় এবং হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি ওজন কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে সুইট লেমনের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলে সমৃদ্ধ হচ্ছে। ইতোপূর্বে কমলা, বারি মাল্টা-১ চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, মেহেরপুর, খাগড়াছড়ি, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
আশা করা যায়, ভবিষ্যতে সাইট্রাস প্রজাতির এই সুইট লেমনও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হবে।
টবে সুইট লেমন চাষ:
টবে সুইট লেমন চাষ করতে কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখা উচিৎ।
পাত্রে লেবু গাছ লাগানোর সময় লেবু গাছগুলিতে ভাল নিষ্কাশন প্রয়োজন হবে। তাই পাত্রের পানি বের হবার ছিদ্র রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। লেবু গাছের নিয়মিত পানি প্রয়োজন হবে। টবের মাটি শুকিয়ে গেলে লেবু গাছের পাতা ঝরে যাবে।
মাটি তৈরির জন্য ১ ভাগ মাটি, ১ ভাগ কোকোপেট ও ভাগ জৈবসার এর সাথে ১৬-১৮ ইঞ্চ টবের জন্য ২ মুঠো সরিষার খৈল ও ১ মুঠ নিম খৈল ও ১ চামচ পটাশ একসাথে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ১৫-২০ দিন রেখে দিতে হবে।
সুইট লেমন গাছে প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন, তাই আপনার গাছে নিয়মিত রোদ্র লাগে এমন জায়গায় রাখুন রাখুন।
টবে একটি স্বাস্থ্যকর সুইট লেমন গাছের জন্য সার গুরুত্বপূর্ণ চাবি। আপনার লেবুর গাছটি যেন নিয়মিত পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করতে রুটিন অনুযায়ি সার প্রয়োগ করুন।
টবে লেবু গাছে বছরে কমপক্ষে ৩ বার (মার্চ,আগস্ট এবং অক্টোবর) সার প্রয়োগ করতে হয়। ১৬-১৮ ইঞ্চি টবের জন্য ১ মুঠো সরিষার খৈল, ২ চামট হাড়ের গুড়ো ও ১ চামচ পটাশ এক সাথে মিশিয়ে নিয়ে এর থেকে ৩ চামচ করে প্রয়োগ করুন।
অন্যান্য পরিচর্যা:
গাছ লাগানোর ৪/৫ মাস পর থেকে নিয়মিত ২০-২৫ দিন অন্তর অন্তর সরিষার খৈল পচা পানি প্রয়োগ করতে হবে । এ কাজের উপরই ছাদের গাছের ফলন অনেকাংশে নির্ভর করছে ।
সরিষার খৈল ১৫ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই পচা খৈলের পানি পাতলা করে গাছের গোড়ায় দিতে হবে । ২ বছর পর টবের আংশিক মাটি পরিবর্তন করে দিতে হবে ।
২ ইঞ্চি প্রস্থে এবং ৬ ইঞ্চি গভীরে শিকরসহ মাটি ফেলে দিয়ে নতুন সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে তা ভরে দিতে হবে । ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর টব বা ড্রামের মাটি কিছুটা খুঁচিয়ে দিতে হবে ।
ডাল-পালা ছাটাই:
লেবু কিংবা লেবু জাতীয় গাছে প্রায়ই কিছু কিছু ডাল মরতে দেখা যায় । এইসব মরা ডালগুলো কেটে দিতে হবে । তা ছাড়াও ছাদের লেবু গাছকে অধিক ডালপালাযুক্ত সুন্দর ভাবে তৈরী করতে হলে চারা লাগানোর পর থেকে কিছুদিন ডাল কেটে দিতে হবে ।
পরবর্তীতে শুধু মরা ডাল কাটলেই চলবে ।কাঁচা অবস্থায় সুইট লেমন ফলটি সবুজ রংয়ের হয় আর পাকলে হলুদ বা কমলা রং হয়। আপনি কাচা বা হলুদ রং অবস্থায় ফল সংগ্রহ করতে পারেন।