Saturday, 10 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

মাটির ক্রমাগত দূষণ বাড়ছে


দেশে মাটির উর্বরতা ক্রমেই ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার জন্য দায়ী কীটনাশক, ইটভাটা, জাহাজভাঙা শিল্প, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইত্যাদি। এর পাশাপাশি মাটির উর্বরতায় নতুন বিপদ যোগ হয়েছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বাড়ছে ক্রমশই। মাটির ক্রমাগত দূষণ বাড়ছে প্রতিদিনই যার কারণ মানুষ নিজেই। ওপরের অংশে তো বটেই, মাটির নিচ দিয়েও মাটির ক্রমাগত দূষণ বাড়ছে

ইটভাটা থেকে সৃষ্ট বিপদ

এফএও ও ইউএনইপির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আরো পড়ুন
গ্রামীণ অর্থনীতির সম্ভাবনাময় খাত: মাসকোভি হাঁস পালন

গ্রামীণ অর্থনীতিতে হাঁস পালন একটি লাভজনক ও টেকসই উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে মাসকোভি হাঁস (যাকে অনেকেই 'চীনা হাঁস' নামে চেনেন) বিশেষভাবে Read more

বাজারে নতুন চালের সরবরাহে দামে স্বস্তি, তবে সবজির দাম ঊর্ধ্বগতি
সবজির উপর মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা উঠে এসেছে গবেষণায়

দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করেছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মিনিকেট চালের Read more

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল ইটভাটা গড়ে উঠছে বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায়।

মাটির সবচেয়ে ওপরের অংশ বা টপ সয়েল এসব ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

সেই সাথে কয়লা পোড়ানো হচ্ছে যেটি মাটির দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করছে।

মাটিকে কয়লা বিষিয়ে তুলছে।

ইটভাটায় পোড়ানো কয়লার ধোঁয়া দূষিত করছে বায়ু, পানি ও মাটিকে।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান জাহাজভাঙা শিল্পের প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মাটি দূষিত করেছে।

এসব এলাকার মাটি পরীক্ষা করে মার্কারি, ক্রোমিয়াম, লেড ইত্যাদি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৩ সালে সারা দেশে ৪ হাজার ৯৫৯টি ইটভাটা ছিল।

আর ২০১৮ সালে তা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২টি হয়েছে।

যার মধ্যে ঢাকা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় ইটভাটা আছে মোট ১ হাজার ৩০২টি।

ঢাকা জেলাতেই ৪৮৭টি ইটভাটা আছে।

প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের উৎস ইটভাটা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক জানান যে তারা দেশের প্রায় দুই হাজার অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইটভাটাকে আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা হবে।

ভবিষ্যতে রূপপুর কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী দিনের মাটির জন্য ঝুঁকি হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পাবনার রূপপুরের ওই প্রকল্প নির্মাণ করছে।

১৯৮৮ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কমে আসছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতও যুক্ত আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

বলা হয়, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে মাটি দীর্ঘমেয়াদি দূষণের শিকার হয় সেই অঞ্চলে।

জাহাজভাঙা শিল্পের কারণে হওয়া আপদ

জাতিসংঘের প্রদত্ত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজের অন্যতম আমদানিকারক দেশ।

ওই জাহাজগুলো ভাঙার পর বের হওয়া ভারী ধাতুর কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে মাটি।

এসব জাহাজ থেকে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেড, কপার, মার্কারির মতো ক্ষতিকর ধাতু বের হয়ে মাটিতে মিশে যায়।

যা মাটি ও বঙ্গোপসাগরের পানির সঙ্গে ভেসে গিয়ে দূষণ ঘটাচ্ছে।

এতে এলাকার কৃষি–ফসল থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্প এলাকায় মোট ১৬০টি জাহাজভাঙা ইয়ার্ড আছে।

এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি ইয়ার্ড চালু রয়েছে।

মাটিদূষণের অন্যান্য কারণ এবং তা কমানোর পথ

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন বলছে, একসময় বিশ্বের অন্যতম ডিডিটি ব্যবহারকারী দেশ ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই কীটনাশক বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে এখনো অর্গানোক্লোরিন নামের মারাত্মক ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে।

এতে মাটির উর্বরতার ক্ষতি হচ্ছে ক্রমাগত।

তবে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার।

তিনি বলেন, কৃষি খাতে যাতে কীটনাশকের ব্যবহার কমে আসে সে জন্য তারা কাজ করছেন।

সেই সাথে জৈব বালাইনাশকের ওপরে জোর দিচ্ছেন তারা।

তবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পের কারণে মাটিদূষণের কিছু প্রমাণ তারা পেয়েছেন বলে জানালেন।

বাংলাদেশের মাটিতে ভূতাত্ত্বিকসহ নানা কারণে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়।

0 comments on “মাটির ক্রমাগত দূষণ বাড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ