আমাদের দেশে ৬৯৪ প্রজাতির বৃক্ষ বর্তমান রয়েছে। যার মধ্যে বিলুপ্তির হুমকিতে ৬২ প্রজাতি বৃক্ষ। যা মোট প্রজাতির সংখ্যার ৯ শতাংশ। এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বৈশ্বিক বৃক্ষ পরিস্থিতি প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন যৌথভাবে প্রকাশ করেছে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট (আইইউসিএন), যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বোটানিকস গার্ডেনসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান। গত সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বিলুপ্তির হুমকিতে ৬২ প্রজাতি বৃক্ষ এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমগ্র বিশ্বে ৫৮ হাজার ৪৯৭ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই ১৪২ প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেই সাথে বিলুপ্তির হুমকিতে ১৭ হাজার ৫১০ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। তালিকায় বিলুপ্তির হুমকিতে ৬২ প্রজাতি রয়েছে বাংলাদেশের বৃক্ষ।
প্রতিবেদনে দ্বিমত পোষণ করেন ঢাবির অধ্যাপক
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এই মূল্যায়নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তার মতে, বাংলাদেশে অনুমিত উদ্ভিদ রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির।
এর মধ্যে বৃক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এক হাজারেরও বেশি।
বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা বৃক্ষের সংখ্যাও বেশি বলে এই অধ্যাপক মত দেন।
প্রকাশিত বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনের শুরুতেই বৃক্ষের একটি সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, বৃক্ষ নিয়ে কাজ করে বিশ্বের এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক ও ব্যক্তিদের এই মূল্যায়নে কাজে লাগানো হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি বৃক্ষ ব্রাজিলে
২৪১টি দেশের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে ব্রাজিলে।
এক তথ্য অনুসারে ব্রাজিলে বৃক্ষ আছে ৮ হাজার ৮৪৭ প্রজাতির। যার মধ্যে বিলুপ্তির হুমকিতে আছে ১ হাজার ৭৮৮ প্রজাতির গাছ।
বিশ্বে দুটি দেশ গার্নসি ও জার্সি তে একটি মাত্র প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে।
সেন্ট হেলেনায় বৃক্ষ প্রজাতির সংখ্যা ১৬টি। এর মধ্যে বিলুপ্তির হুমকিতে আছে ১১টি।
মাদাগাস্কারে বৃক্ষের প্রজাতি আছে ৩ হাজার ১২৯টি যার ৫৯ শতাংশই বিলুপ্তির হুমকিতে আছে।
বিলুপ্তির কারণ হিসেবে কৃষিকাজ, গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহে রাখা, পশু ও হাঁস–মুরগির খামার, বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কাঠামো উন্নয়ন, অগ্নিকাণ্ড, খনিজ উত্তোলন, বাণিজ্যিক বৃক্ষরোপণ, আগ্রাসী প্রজাতির বনায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে।
তবে কোন দেশের কোন প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির হুমকিতে আছে, সেসব নাম এ প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু জরিপ পরিচালনা করেছেন।
তার জরিপকৃত এলাকা ছিল মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া, হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা, সাতছড়ি, শেরপুরের গজনি, কক্সবাজারের খাসিয়াখালী, টেকনাফ, ইনানি, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, ভোলার চর কুকরি–মুকরি ও কুমিল্লার লালমাই পাহাড়।
তিনি জানান যে, দেশে অনুমিত পুষ্প জাতীয় উদ্ভিদের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
যার মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৪০টি।
যার ২৭ শতাংশ বৃক্ষ, বীরুৎ–জাতীয় উদ্ভিদ ৩৭ শতাংশ, গুল্ম ১৮ শতাংশ, লতাজাতীয় ১৪ শতাংশ এবং পরজীবী ও পরগাছা ৪ শতাংশ।
কোন প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে আছে, তা নিয়ে মাঠপর্যায়ে জরিপ বা অনুসন্ধান হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।