
ঢাকা গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশ কাঁচা পাট রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চটকলগুলো। কাঁচামালের তীব্র অভাবে অনেক মিলের উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন’-এর এক প্রতিবেদনে শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ও আকাশচুম্বী দাম
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে কাঁচা পাটের বাজারদর প্রতি টনে ১ লাখ ১০ হাজার রুপি ছাড়িয়ে গেছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চটকলগুলোর একটি বড় অংশ তাদের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়ার আশায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পাট মজুত করে রাখছেন, যা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শিল্পাঞ্চলের চটকলগুলো বর্তমানে সপ্তাহে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি শিফটে চলছে, যা একটি মিল সচল রাখার ন্যূনতম মাত্রার চেয়েও অনেক কম। কাঁচামাল প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা ও উচ্চমূল্যের কারণে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মিলগুলোও এখন সতর্ক অবস্থানে থেকে উৎপাদন সীমিত করছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় আইজেএমএ
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১৮ ডিসেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গিরিরাজ সিংকে একটি জরুরি চিঠি দিয়েছে ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)। সংগঠনটির চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্ত চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকারের আকস্মিক এই সিদ্ধান্তের ফলে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে মিলগুলো বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে পাটের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
রাঘবেন্দ্র গুপ্ত সতর্ক করে বলেন, “এই সংকটের সম্মিলিত প্রভাবে মিলের স্বাভাবিক কার্যক্রম, হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং পাট পণ্যের সামগ্রিক মূল্যশৃঙ্খল (Value Chain) হুমকির মুখে পড়েছে।”
পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বীজ রপ্তানি বন্ধের প্রস্তাব
চটকল মালিকদের এই সংগঠনটি সংকটের পাল্টা জবাব হিসেবে বাংলাদেশ থেকে উচ্চফলনশীল পাট বীজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। আইজেএমএ-এর দাবি, বাংলাদেশ উচ্চফলনশীল পাট বীজের জন্য ভারতের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। বাংলাদেশের পাট উৎপাদন সক্ষমতা ধরে রাখতে এই বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকেও বীজ রপ্তানি বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে কাঁচা পাটের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলোতে উৎপাদন সংকোচন আরও বাড়তে পারে, যা এই প্রাচীন শ্রমনিবিড় শিল্পের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

