বস্তায় আদা চাষ করুন খুব সহজেই। এর জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয় এই কথা জানেন না। এতে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে আরেকটি ফসল ফলানো যাবে কোনো সার ছাড়াই। কম খরচে বস্তায় আদা চাষ করুন, জেনে নিন এ পদ্ধতির বিস্তারিত।
এই পদ্ধতিতে মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
কিভাবে চাষ করবেন
প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে, যাতে মাটি ঝুরঝুরে হয়।
বস্তায় মাটিতে জৈব সার বা ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে।
হাড়ের গুঁড়ো, গোবর সার ইত্যাদি পরিমাণমতো যোগ করতে হবে।
মাটি তৈরি করার পর বস্তায় ভরে নিতে হবে।
এরপর ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ চাষের জন্যে বসিয়ে সামান্য জল দিতে হবে।
এরপর বস্তার উপর ঢেকে দিতে হয়, এতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকবে।
কন্দ থেকে অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেরিয়ে আসবে।
অথবা তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা আলাদা একটি বালি ভর্তি টবে পুঁতে দিন।
ওই আদা থেকে ২০-২৫ দিন পর গাছ বের হবে।
তখন বস্তার মুখে তিন জায়গায় আদার চারা সাবধানে তুলে বসিয়ে দিন।
এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে দিনের অধিকাংশ সময় রোদ পায়।
আদা গাছ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাড়তে থাকবে।
পরিচর্যা করবেন কিভাবে
চারা লাগানোর দু’মাস পরে আধ চামচ ইউরিয়া ও চার চা চামচ সর্ষে খৈল মাটিতে প্রয়োগ করুন।
মাঝে মাঝে মাটি খুড়ে একটু আলগা করে দিতে হয়।
আদার কন্দ লাগানোর আগে শোধন করে নিলে এতে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচানো যাবে।
এছাড়া ব্যবহার করা যায় অন্যকোনো ছত্রাকনাশক।
শোধনের পর ছায়ায় আধা ঘণ্টা শুকিয়ে নিতে হবে।
রোগ ও পোকামাকড়
রাইজম রট রোগঃ
Pythium aphanidermatum (পিথিয়াম এফানিডারমেটাম ) নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারনে রাইজম রট রোগ হয়।
এ রোগ রাইজমে আক্রমণ করে। যার কারণে আদা বড় হতে পারে না, গাছ দ্রুত মরে যায়।
এ রোগের কারণে প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু পাতায় কোন দাগ দেখা যায় না।
গাছ পরবর্তীতে ঢলে পড়ে এবং শুকিয়ে মরে যায়।
রাইজম পচে যায় এবং এর ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায়।
এ রোগ বেশী দেখা যায় ভেজা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায়।
এ রোগের প্রকোপ বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা থাকলে বেড়ে যায়।
বীজ, পানি ও মাটির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
কিভাবে ব্যবস্থাপনা করবেন
গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণরূপে তুলে ধ্বং স করতে হবে।
নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হবে, একই জমিতে বার বার চাষ করা যাবে না।
ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
রোগ ও পোকা মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাঃ
কান্ড আক্রমণ করে এই ছিদ্রকারী পোকা।
এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যার ফলে উৎপাদন কম হয়।
পোকার মথ কমলা হলুদ রঙের, পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে।
হালকা বাদামি বর্ণের কীড়ার গায়ে সুক্ষ্ণ শুং থাকে।
পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায়। এতে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
আদার ফলন ও ফলন সংগ্রহ
জুন-জুলাই মাসে আদা লাগানো হলে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে।
তিনটি গাছ থেকে এক একটি বস্তায় এক-দেড় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।