
টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্থানীয় বাজারগুলোতেও আনারসের প্রচুর আমদানি থাকা সত্ত্বেও দাম কমেনি, বরং পাইকার ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশ ভালো রয়েছে। গরমের কারণে আনারসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াকেও দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এই লাভজনক ফলন দেখে পাহাড়ের অনেক এলাকায় আনারসের আবাদও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও বাণিজ্যের সম্ভাবনা
আনারস চাষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পাইকাররা জানান, দেশের বিভিন্ন মোকামে আনারসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর মধুপুর গড়ে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকার আনারস বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় মোট ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে, যার মধ্যে মধুপুরেই ৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর। এর মধ্যে জলডুগি এবং ক্যালেন্ডার প্রজাতির পাশাপাশি ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা এমডি-টু জাতের আনারসেরও চাষ হচ্ছে।
মধুপুর আনারসের ইতিহাস ও জিআই স্বীকৃতি
জানা যায়, ষাটের দশকের শেষদিকে মধুপুরের আউশনারা ইউনিয়নের ভেরেনা সাংমা ভারতের মেঘালয় থেকে কয়েকটি জায়ান্টকিউ জাতের আনারসের চারা এনে মধুপুর গড়ে রোপণ করেন। এরপর থেকেই এই এলাকার মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বাড়তে থাকে। ফলন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। সম্প্রতি এই অঞ্চলের লাল মাটির আনারস জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এই জিআই স্বীকৃতি মধুপুরের আনারসকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভে সাহায্য করবে। বর্তমানে মধুপুরের আনারস স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান উৎস। প্রতি বছর প্রায় ৬ মাস ধরে কোটি কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়।

আনারসের বড় বাজার জলছত্র
মধুপুরের আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার হলো জলছত্র। এছাড়া মোটের বাজার ও গারো বাজারও আনারস বেচাকেনার জন্য উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, যেমন- ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং গাজীপুর থেকে পাইকাররা এসব বাজারে আসেন আনারস কিনতে।
স্থানীয় চাষি শাহীন জানান, “কয়েক দিন ধরে বাজারে আনারসের দাম ভালো যাচ্ছে। পাইকারের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা ভালো দাম পাচ্ছি।” তবে কিছু চাষি জানান, আনারস চাষের খরচ, বিশেষ করে চারা, সার, কীটনাশক এবং পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়েছে। ট্রাক চালকরাও বলছেন, সড়ক ভালো থাকায় তারা সরাসরি বাগান থেকেও আনারস নিয়ে মোকামে যেতে পারছেন। এতে পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পদক্ষেপ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, “টাঙ্গাইল আনারস উৎপাদনের একটি অন্যতম জেলা। আমরা চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দিচ্ছি। এ বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। তবে আমরা কৃষকদেরকে আনারস দ্রুত পাকানোর জন্য অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহার না করার জন্য সচেতন করছি।” তিনি আরও বলেন যে, এমডি-টু জাতের আনারস রপ্তানি করার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।