একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি হল মটরশুঁটি। খাবারে বিভিন্নভাবে মটরশুটির ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা ও শুকিয়ে ডাল হিসেবে খাওয়া যায়, কিংবা ভেজে খেতেও বেশ মজার। মটরশুঁটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি, সেই সাথে এটি উদ্ভিজ্জ আমিষের একটি বড় ধরণের উৎস। খুব সহজেই মটরশুঁটির চাষ করা যায়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক খুব সহজেই মটরশুঁটির চাষ করা যায় কিভাবে!
খুব সহজেই মটরশুঁটির চাষ করা যায় বিধায় বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যাপকহারে মটরশুঁটির চাষ হচ্ছে।
কিভাবে চাষ করবেন মটরশুঁটি
মটরশুঁটি মূলত একটি শীত প্রধান ও আংশিক আর্দ্র জলবায়ুর উপযোগী ফসল।
মটরশুঁটি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী তাপমাত্রা হল ১০ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
দো-আঁশ মাটি মটরশুঁটি চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
তবে এঁটেল মাটিতে চাষ করা গেলেও তাতে ফলন ভালো হয়না, চারা রোগে মারা যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
তবে মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে নতুবা গাছ বাচবে না।
কি ধরণের জাত চাষ করবেন
চাষ করার মতো মটরশুঁটির বেশ কিছু জাত আছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে আরকেল, আলাস্কা, গ্রিন ফিস্ট, স্নো ফ্লেক, বনভিল, সুগার স্ন্যপ ইত্যাদি।
তাছাড়াও ব্যাপক জনপ্রিয় জাতের মধ্যে রয়েছে বারি মটরশুঁটি-১, বারি মটরশুঁটি-২, বারি মটরশুঁটি-৩, ইপসা মটরশুঁটি-১, ইপসা মটরশুঁটি-২, ইপসা মটরশুঁটি-৩, আলাস্কা, সুগার স্নপ ইত্যাদি।
কখন চাষ করতে হয় মটরশুটি
নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মটরশুঁটি চাষের সঠিক সময়।
এই চার মাস মোটামুটি অনুকূল জলবায়ুগত পরিবেশ বিরাজমান থাকে।
তবে নভেম্বর মাসেই মটরশুঁটির বীজ বপন করা হলে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়।
তবে মটরশুঁটির বীজ অক্টোবর মাসেও বপন করা যেতে পারে।
প্রায় সময়ই দেখা যায় এরকম সময়ে বৃষ্টি হবার কারণে এসময় জমি তৈরি করা সম্ভব হয় না।
তাই মটরশুঁটির চারা সঠিক সময়ে রোপণ করতে হবে।
খেয়াল রাখবেন মটরশুঁটির গাছ চারা অবস্থায় খুবই দুর্বল হয়ে থাকে।
তাই মটরশুঁটি চাষের জন্য জমি খুব ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
৪ থেকে ৫ বার জমি চাষ করতে হবে ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
মটরশুঁটির বীজ বপনের পূর্বে মাটিকে ভালভাবে বীজ বালাই নাশক দ্বারা শোধন করে নিতে হবে।
মটরশুঁটির বীজ সারি সারি করে বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বীজ বপন করার সময় ৪০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ২০ সেন্টিমিটার পরপর বীজ রোপণ করতে হবে।
সাধারণত জোড়া সারি পদ্ধতিতে মটরশুঁটির চাষ করা ভালো।
জলাবদ্ধতার আশঙ্কা থাকলে সারিগুলো উচু স্থানে তৈরি করতে হবে।
হেক্টর প্রতি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হবে।
মাটিতে সার প্রয়োগ
মটরশুঁটি চাষের জন্য প্রতিশতক জমিতে ৪০ কেজি গোবর সার জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
তাছাড়াও ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম টিএসপি, সার প্রয়োগ করতে হবে।
এর প্রথম অর্ধেক জমি চাষের সময় ও বাকি অর্ধেক পরবর্তীতে দুই কিস্তি করে প্রয়োগ করতে হবে।
মটরের বীজ সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পরে বপন করতে হবে।
সেচ ও পরিচর্যা
শুকনো মৌসুমে মটরশুঁটিতে কমপক্ষে ২ থেকে ৩টি পানির সেচ দিতে হবে।
ফল ধরার পর জমিতে অন্তত একবার সেচ দেয়া জরুরি।
জমিতে নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
মাঝে মাঝে হালকা কোপ দিয়ে মাঝে মাঝে আগাছা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
মটরশুঁটিতে প্রধানত ড্যাম্পিং অফ, রাস্ট, পাউডারি মিলিডিউ এবং অ্যানথ্রাকনোজ এর আক্রমণ হয়ে থাকে।
চারা অবস্থায় থাকাকালে এসব রোগ আক্রমণ করে।
এর জন্য ভালো ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ক্ষেতে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন প্রকার পোকার আক্রমণ দেখা যায়, এরকম দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বীজ বপনের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে।
গাছে ফুল আসার ২০ থেকে ২৫ দিন পর বীজের জন্য মটরশুঁটি সংগ্রহ করতে পারবে
ন।
মটরশুঁটি বা ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল যখন বীজ পূর্ণ আকারপ্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু শক্ত হয়নি।