Sunday, 22 December, 2024

সর্বাধিক পঠিত

কিভাবে কবুতর পালন করবেন, জেনে নিন বিস্তারিত


কবুতর পালন

কবুতর আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি পাখি। শখের বশেই অনেকে পালন করে থাকেন কবুতর। তবে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকে এটি পালন করতে পারেন না অনেকেই। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে কবুতর পালন করবেন তার বিস্তারিত।

কবুতরের বাসস্থানঃ

উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুচলাচল আছে এরূপ উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হবে, যা খামারীর আবাসস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দুরে এবং দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত।

আরো পড়ুন
বোম্বাই মরিচ (Capsicum annuum) চাষ পদ্ধতি
বোম্বাই মরিচ (Capsicum-annuum)

বোম্বাই মরিচ (Capsicum annuum) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি ঝাল মরিচের একটি জাত যা উচ্চ ফলনশীল এবং স্বাদে ঝাল। সঠিক Read more

আগাম ফুলকপি চাষ পদ্ধতি
ফুলকপি

ফুলকপি চাষ বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি চাষ। এর চাষ সহজ এবং এটি কৃষকের জন্য লাভজনক হতে পারে। এখানে নিনজা Read more

মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০-২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮-১০ফুট হওয়া ভাল।

একটি খামারের জন্য ৩০-৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ।

এরূপ ঘরের মাপ হবে ৯ ফুট ৮.৫ ফুট। কবুতরের খোপ ২-৩ তলা বিশিষ্ট করা যায়।

এরূপ খোপের আয়তন প্রতিজোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি.x ৩০ সে.মি.x ২০ সে.মি. এবং বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সে. মি.x ৫৫ সে.মি. x৩০ সে.মি.।

ঘর স্বল্প খরচে সহজে তৈরী এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা যায়।

খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড়-কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরী করে নেয়।

ডিম পাড়ার বাসা তৈরীর জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস, কচি ঘাসের ডগাজাতীয় দ্রব্যাদি উত্তম।

খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়।

খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

বাচ্চা ফোটার ৪-৫ দিন পর কবুতরের বাচ্চার চোখ ফোটে।

ফলে বাচ্চাগুলো কোন দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা।

এসময় স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর তাদের পাকস্থলী (ক্রপ) থেকে ঘন ক্রীম বা দধির মত নিঃসরণ করে যাকে কবুতরের দুধ বলে।

এ দুধ অধিক আমিষ, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে।

বাচ্চাগুলো নিজে খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর উভয়ে দানাদার খাদ্যের সাথে দুধ মিশিয়ে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়।

  • কবুতরের জন্য তৈরীকৃত খাদ্য শর্করা, আমিষ, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমপন্ন সুষম খাদ্য হতে হবে। কবুতর ম্যাশ বা পাউডার খাদ্যের তুলনায় দানাদার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে।
  • ছোট আকারের কবুতরের জন্য ২০-৩০ গ্রাম, মাঝারী আকারের জন্য ৩৫-৫০ গ্রাম এবং বড় আকারের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের মধ্যে গম, ধান, ভূট্টা, সরগম, ওট শতকরা ৬০ ভাগ এবং লেগুমিনাস বা ডাল জাতীয় খাদ্যের মধ্যে সরিষা, খেসারী, মাটিকলাই শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ সরবরাহ করতে হবে।
  • কবুতরের ভিটামিন সররাহের জন্য বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন ছাড়া সবুজ শাকসবজি, কচি ঘাস সরবরাহ করা প্রয়োজন।
  • প্রতিদিন ২ বার খাদ্য সরবরাহ করা ভাল। মাঝে মাঝে পাথর, ইটের কণা (গ্রিট) এবং কাঁচা হলুদের টুকরা দেয়া উচিৎ কারণ এ গ্রিট পাকস্থলীতে খাবার ভাঙতে এবং হলুদ পাকস্থলী পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • কবুতরের ডিম দেয়ার সময় গ্রিট মিশ্রণ বা খনিজ মিশ্রণ, ডিম এবং ডিমের খোসা তৈরী এবং ভাল হ্যাচাবিলিটির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এই খনিজ মিশ্রণ বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১% তৈরী করতে হবে  ।

পানি সরবরাহঃ

প্রতিদিন গভীর বা খাদ জাতীয় পানির পাত্র ভালভাবে পরিষ্কার করে ৩ বার পরিষ্কার পরিচছন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত।

দুই সপ্তাহ পর পর পটাশ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করলে পাকস্থলী বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ

খামার হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার এবং রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
১। কবুতর উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

২। সুস্থ্য সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে।

প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে।

এক্ষেত্রে কবুতরের মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে।

অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।

৩। কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
৪। খামারে মানুষের এবং বন্য পাখি ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণী যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

প্রতিবার খামারে প্রবেশ করার পূর্বে এবং খামার হতে বাহির হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৫। কোন কবুতর অসুস্থ হলে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হবে।

অসুস্থ বা মৃত কবুতর এর রোগের কারণ জেনে অন্যান্য জীবিত কবুতরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

টিকা প্রদানঃ

খামারে রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের প্রজননকালীন সময়ে প্যারেন্ট কবুতর গুলোকে রাণীক্ষেত রোগের মৃত টিকা প্রয়োগ করা উত্তম। টিকা প্রয়োগের কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পর বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করতে হবে। তবে বাচ্চা কবুতর উড়তে শেখার সাথে সাথেও টিকা প্রয়োগ করা যায়। জীবিত বা মৃত উভয় টিকাই প্রয়োগ করা যায়। জীবিত টিকা চোখে এবং মৃত টিকা চামড়ার নীচে বা মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম টিকা (জীবিত) প্রয়োগের কমপক্ষে ১৪ দিন পর দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

0 comments on “কিভাবে কবুতর পালন করবেন, জেনে নিন বিস্তারিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *