Wednesday, 28 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

কচুর লতি চাষ: লাভজনক এক কৃষি উদ্যোগ


বাংলাদেশে কচুর মুখী, কচুর লতি, কচুর শাক ও কচুর ডগা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পানিকচুর চাষ হয়, যা থেকে বছরে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন লতি উৎপাদিত হয়। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষ করলে এর উৎপাদন কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।

উপযুক্ত জাত ও মাটি

বাংলাদেশে লতিকচুর অনেক জাত থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ‘লতিরাজ’ জাতটি চাষের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ পলি দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটি লতি চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বেলে মাটি রস ধরে রাখতে পারে না বলে তা এড়িয়ে চলা ভালো।

আরো পড়ুন
টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষকের ধান ঘরে ওঠার আগেই নষ্ট

টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পাকা ধান এখন পানিতে ভাসছে। জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ ধান কাটা হলেও অবশিষ্ট ধান নিয়ে Read more

গোটালী বা টাটকিনি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সফলতা

এক সময় ভোজনরসিকদের পাতে নিয়মিত দেখা যেত যে ছোট মাছটি, সেটি ছিল ‘গোটালী’। স্বাদে অতুলনীয় এই দেশি মাছটি এক সময় Read more

জমি তৈরি ও রোপণ

মাঝারি নিচু থেকে উঁচু জমি, যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ধরে রাখা যায়, এমন জমি লতি চাষের জন্য আদর্শ। লতি উৎপাদনের জন্য শুকনো ও ভেজা উভয় পদ্ধতিতেই জমি তৈরি করা যায়। শুকনো পদ্ধতিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হয়। ভেজা পদ্ধতিতে ধান রোপণের মতো করে জমি কাদা করে নিতে হয়। খরিপ মৌসুমে লতি সংগ্রহ করা হয় বলে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

বংশবিস্তার ও চারা রোপণ পদ্ধতি

পূর্ণবয়স্ক পানিকচুর গোড়া থেকে উৎপন্ন ছোট চারাগুলোই বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোপণের জন্য চার থেকে ছয় পাতার সতেজ চারা নির্বাচন করতে হয়। চারার উপরের দুই থেকে তিনটি পাতা রেখে বাকি সব পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে। যদি চারার গোড়া বেশি লম্বা হয়, তবে কিছুটা শিকড়সহ গোড়ার অংশবিশেষ ছাঁটাই করে দেওয়া যেতে পারে। সারি থেকে সারি ৬০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছ ৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের গভীরতা ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।

পরিচর্যা

চারা রোপণে দেরি হলে সেগুলো ভেজা মাটি ও ছায়াযুক্ত স্থানে আঁটি বেঁধে বা কাছাকাছি করে রাখতে হবে। রোপণের সময় বা কিছুদিন পর জমিতে বেশি পানি থাকার কারণে চারা হেলে যাওয়া এড়াতে জমি কাদা করার সময় খুব বেশি নরম করা উচিত নয়। গাছ কিছুটা বড় হলে গোড়ার হলুদ বা শুকিয়ে যাওয়া পাতা সরিয়ে ফেলতে হবে। ক্ষেত আগাছামুক্ত ও পরিষ্কার রাখতে হবে। রোপণের এক থেকে তিন মাসের মধ্যে ক্ষেতে যেন কোনো আগাছা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানিকচুর গাছে লতি আসার সময় ক্ষেতে পানি রাখা উচিত নয়, তবে একেবারে শুকনো রাখলেও লতি কম বের হয় বা লতির দৈর্ঘ্য কমে যায়। তাই ‘জো’ অবস্থা (আর্দ্র কিন্তু কাদা নয়) বজায় রাখা প্রয়োজন।

সার প্রয়োগ

প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ টন জৈবসার, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ১২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৭৫ কেজি এমওপি ব্যবহার করতে হয়। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার দুটি কিস্তিতে, রোপণের ৩০ দিন ও ৬০ দিন পর সারির মাঝে ছিটিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। জমিতে দস্তা ও জিঙ্কের অভাব থাকলে জিঙ্ক সালফেট ও জিপসাম সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। জয়পুরহাটের কৃষকরা প্রতিবার লতি সংগ্রহের পর ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করেন।

সেচ ও নিকাশ

কচু একটি জলজ উদ্ভিদ হলেও এটি দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না, বিশেষ করে লতি উৎপাদনের সময়। জমিতে পানি থাকলে লতি কম হয়, কিন্তু যদি ‘জো’ অবস্থা বজায় থাকে, তবে লতি বেশি বের হয়।

0 comments on “কচুর লতি চাষ: লাভজনক এক কৃষি উদ্যোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ