Saturday, 30 November, 2024

সর্বাধিক পঠিত

ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা


ভুট্টা চাষে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হওয়ায় ধানের চেয়ে এ ফসরের আবাদ বেড়েই চলেছে। এছাড়াও কর্নফ্ল্যাক্স, কর্নঅয়েল ও সুইটকর্নের মতো খাদ্য পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে ভুট্টার চাহিদা। এছাড়া বেশি লাভের আশায় বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে কৃষকরা।

মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগি ও গো-খাদ্য হিসেবেও ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদাও বাড়ছে। ভুট্টা চাষ থেকে এর সবকিছুই কাজে লাগে। ভুট্টা গাছের পাতা সুষম গো-খাদ্য এবং কান্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও স্বল্প ব্যয়ে মাড়াই যন্ত্র দিয়ে কৃষক ভুট্টার চাষ সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই এবারেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে ভুট্টার।

সোনালী অর্থকরী দানাদার শস্য ভুট্টা বাংলাদেশের কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুট্টায় কৃষকরা অধিক পরিমাণে ফসল ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। সেদিক দিয়ে কৃষকদের কাছে এখন ভুট্টা উপার্জনশীল ফসল।

আরো পড়ুন
বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি: ভোক্তারা অসহায়

বাজারে পেঁয়াজ, আলু, ভোজ্যতেলসহ সবজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। কয়েক মাস ধরে এসব পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় নিম্ন ও Read more

সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তিন ট্রাক চিংড়ি জব্দ

সাতক্ষীরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তিন ট্রাক বাগদা ও গলদা চিংড়ি জব্দ করে তা ধ্বংস করা হয়েছে। মাছের ওজন বাড়াতে জেলি Read more

ভুট্টা এখন উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আগামীতে ভুট্টা বাংলাদেশের মানুষের খাবারের জোগান বহুলাংশে পূরণ করবে। বর্তমানে দেশে ভুট্টার চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর ৬০ লাখ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, দেশে রবি ও খরিপ মৌসুমে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সারা দেশে রবি মৌসুমের ভুট্টা হারভেস্ট চলছে। এবার ৪ লাখ ৬৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয় এবং হেক্টর প্রতি গড় ফলন পাওয়া যায় ১০.৭২ টন। খরিপ মৌসুমের ভুট্টা এখনও হারভেস্ট শুরু হয়নি। এ জাতীয় ১ লাখ ২৫ হেক্টর জমিতি চাষ হয়েছে। এতেও হেক্টর প্রতি ফলন আশা করা হচ্ছে ৮/৯ টন। বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বারি হাইব্রিড ভুট্টা, ডাব্লিউ এমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ণ-১, ডাব্লিউ এমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-১ সহ বিভিন্ন উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের ভুট্টা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেছে।

কৃষকরা বলছেন, বর্তমানে ৫০ শতক জমিতে দেশি ও বিদেশি জাতের ভুট্টার ফলন হয়ে থাকে ৮০ হতে ১১০ মণ পর্যন্ত। বর্তমানে ১ বস্তা (৮২ কেজি) কাঁচা ভুট্টার দাম ১১০০ হতে ১২০০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউপির কৃষক মশিউর জানান, ভুট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম দিতে হয়। সেচ সুবিধার কারণে তিনি ধান আবাদের চেয়ে ভুট্টার আবাদে অধিক আগ্রহী।

কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ভুট্টা বাজারে বিক্রির পরেও এর শুকনো গাছ ও মোচা বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও ভুট্টা ব্যবহারে বিভিন্ন খাবার উপযোগী যেমন-খই, রুটি, গো-খাদ্য ইত্যাদি খাবারে ভুট্টার গুরুত্ব অনেক।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহা-পরিচালক ড. এছরাইল হোসেন বলেন, ভুট্টা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষকদের জন্য এক প্রকারের আশীর্বাদ। ভুট্টায় ফলন বেশি, চাষও সহজ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সেদিক দিয়ে ভুট্টা উপার্জনশীল ফসল। আমরা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছি এবং কৃষকদের মাঠে সম্প্রসারণ করছি। আগামী ২/১ বছরের মধ্যে ভুট্টায় স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করবো।

আগামীতে ভুট্টা বাংলাদেশের মানুষের খাবারের জোগান বহুলাংশে পূরণ করবে। আগে ভুট্টা শুধু প্রাণী খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ভুট্টা থেকে কর্নফ্ল্যাক্স, কর্নঅয়েল, সুইটকর্নসহ বিভিন্ন রকম খাদ্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে ভুট্টায় যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট, সিমিটসহ বিভিন্ন সংস্থাগুলো কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি উপকূলীয় এবং পার্বত্য অঞ্চলেও ভুট্টা চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ করেছে সরকার।

ভুট্টার দানা ছাড়ানোর জন্য Thresher যন্ত্র উৎপাদন করছে। বর্তমানে দেশে ২০ হাজার হতে ২৫ হাজার ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র তৈরি করে কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ও ভুট্টা আবাদ সম্প্রসারণে ‘ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র’ অবদান রাখছে। ফলে জীবণ ও জীবিকার মান উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।

0 comments on “ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *