বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জেদ্দায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসির) আফ্রিকান সদস্য দেশগুলোতে যৌথ কৃষি প্রকল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এ সব কৃষি প্রকল্পে বাংলাদেশ তার দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি জ্ঞান সরবরাহ করতে পারে বলে তিনি জানান।
তিনি ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিনের সঙ্গে সংস্থাটির সদর দপ্তরে বৈঠকে এ আহ্বান জানান। বৈঠকে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
আফ্রিকার দেশ সুদান, উগান্ডাসহ অন্যান্য দেশ তাদের অনাবাদি উর্বর জমি এসব প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারে যেখানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ওআইসির অন্যান্য সমৃদ্ধশালী দেশগুলো অর্থ বিনিয়োগ করবে। প্রস্তাবিত কৃষি প্রকল্প থেকে ওআইসির সদস্য দেশগুলো পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারে বলে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি ওআইসির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া খুঁজে দেখবেন।
ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের সব জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশের যে অভাবনীয় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অর্জন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন মহাসচিব। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়াকে তিনি বর্তমান সরকারের সফলতা একটি উল্লেখযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেন। মহাসচিব জানান, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ওআইসির সদস্যভুক্ত অনেক দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের বিষয় উল্লেখ করে এ সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য ওআইসি কীভাবে আরো জোরদার ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য গত মাসে বাংলাদেশে ওআইসির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় প্রতিমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ জানান।
ওআইসির মহাসচিব ড. ওথাইমিন বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এ সংকট নিরসনে ওআইসির পক্ষ থেকে সব সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ওআইসিকে মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে দেখতে চায় বলে উল্লেখ করেন এবং ২০২০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ব্রেনস্টরমিং সেশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওআইসির সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি ওআইসির নিয়োগে সমভাবে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের ওপর জোর দেন। প্রতিমন্ত্রী ওআইসির সদস্যভুক্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের টিকা সরবরাহের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।
এর আগে ওআইসির মহাসচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সফরসঙ্গীদের তার কার্যালয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বৈঠকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন, জেদ্দার দায়িত্বপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন।