বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ১৪২৮ বঙ্গাব্দের কার্যনির্বাহী নতুন কমিটি প্রত্যাখান করেছে ওই সংগঠনের একাংশ। এ বিষয়ে শনিবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।
সাংবাদিক সম্মেলনে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ১৪২৭ বঙ্গাব্দ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রকিবুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সংগঠনটির একাংশ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে না পারায় বিগত কয়েক বছর যাবত সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক কোটারি করে অসংখ্য কমিটিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এবং স্বেচ্ছাচারীতা চালিয়ে যাচ্ছে যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের গঠণতন্ত্রের পরিপন্থি। উচ্চ মহলের মদদপুষ্ট হয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সুপরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ঐক্য বিনষ্ট করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ এপ্রিল সাধারণ সভায় নতুন কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাবিত কমিটি উপস্থাপিত হলে তা সাধারণ সদস্যদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচনা সত্ত্বেও সভাপতির অনুমতি ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বিষয় নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এ সালামকে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কমিটি ঘোষণা করান। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখান করছি। নতুন বিষয় কমিটি করে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের গঠনতন্ত্র মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হবে।
জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস মাহফুজুল বারিকে সভাপতি ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালামকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষনা করা হয়। কমিটি ঘোষনার পরপরই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের উপদেষ্টামন্ডলীয় সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন চৌধুরী বলেন, ওই দিন সভাপতিকে কথা বলতে না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে তাদের মনোঃপুত কমিটির অনুমোদন দেওয়া খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে যা অতীতে কখনো হয়নি। সভায় সভাপতি উপস্থিত থাকার পরও এমনটি করার উদ্দেশ্য ছিল পকেট কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪২৭ বঙ্গাব্দ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, সভাপতিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি এমনটি সত্য নয়। উনি (সভাপতি) আসলে সভার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কিছু শিক্ষক অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হট্টগোল শুরু করে দিলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। পরে সিনিয়র শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে ও নিদিষ্ট সময়ে সভা শেষ করার জন্য ওই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র মেনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সভাপতিত্বে সভা পরিচালিত করা হয়।
ওই সভার রেকর্ডিং চাইলে তিনি বলেন, সেখানে সভাপতির পক্ষের কিছু শিক্ষক এমন কিছু অশালীন শব্দচয়ন করেছেন যা শিক্ষকদের সম্মানে প্রকাশ করা ঠিক হবেনা।
এ বিষয়ে নতুন ঘোষিত কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস মাহফুজুল বারি বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি করা হয়েছে। সেখানে সবার সম্মতিতে আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে আমরা কমিটি সুন্দরভাবে পরিচালিত করছি। আসলে একটি পক্ষ চায় না বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলুক। ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে তারা এমন কাজগুলো করছেন।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, তাদের অভিযোগ বস্তুনিষ্ঠ নয়। এমন অভিযোগগুলো সুশীল সমাজেও গ্রহণযোগ্য নয়। সহনশীলতা বজায় রেখে এবং পরস্পরকে দোষারোপ না করে প্রত্যেক সংগঠনের ঐক্য ধরে রাখা উচিত।