স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাছ থেকে দেশের ৬৯টি শস্য গুদামের মালিকানা পেয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই মালিকানা হস্তান্তরে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান।
এছাড়া একই সময়ে দেশের ৮টি বিভাগের ৪৭টি জেলার ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রংপুর, শেরপুর, মাগুরা ও বরিশাল অঞ্চলের ২৭টি জেলার ৫৬ উপজেলায় ৮১টি গুদাম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১২টি গুদাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নিজস্ব এবং অন্যগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছ থেকে বার্ষিক ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
৬৯ শস্য গুদামের মালিকানা পেল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ওই ৬৯টি খাদ্য গুদামের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাব পাঠালে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাতে সম্মতি দেয়। সে বিষয়েই বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক হলো।
প্রতিটি গুদামের গড় ধারণ ক্ষমতা ২৫০ মেট্রিক টন। বছরে গড়ে ৪ হাজার ৩৬৫ জন কৃষক এসব গুদামে ৪ হাজার ৯২১ মেট্রিক টন শস্য জমা রাখতে পারেন। ফসল জমা রাখার বিপরীতে বছরে তাদের মোট ৬০৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। পরে জমা রাখা শস্য বিক্রি করে তারা সেই ঋণ শোধ করতে পারেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শস্যগুদাম কার্যক্রমটি একটি জনপ্রিয় ও সফল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। এ সাফল্যকে সামনে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সারাদেশে আরও শস্যগুদাম নির্মাণ করা হবে। একই সাথে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণও সারাদেশে সম্প্রসারিত ও বর্ধিত করা হবে। যাতে করে কৃষিকে আরও উন্নত করা যায়; কৃষকের জীবনমানকে উন্নত করার কাজে লাগানো যায়।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মজুদ করতে না পারায় কৃষককে কম দামে ধান বিক্রি করে দিতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ১৯৭৮ সালে চিন্তা করা হয়েছিল, ধান বিক্রি না করে কৃষক যাতে কিছুদিন ধরে রাখতে পারে। সেজন্যই গুদাম প্রয়োজন।
তিনি বলেন, শুধু ৬৯টি নয়, সারাদেশেই আমাদের খাদ্য গুদাম করতে হবে। আমরা দাবি করছি আমরা ‘কৃষি বান্ধব’, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
শস্য গুদামের মালিকানা হস্তান্তর প্রসঙ্গে রাজ্জাক বলেন, সবাই সম্রাজ্য বাড়াতে চায়। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ খুব সহজেই ৬৯টি গুদাম হস্তান্তর করেছে এবং কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার জন্য জমি দিচ্ছে। আমি তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। এটা দিয়ে আমাদের শুরু। আমরা এই প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারিত করব।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প এর অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে এসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মিত হলে কৃষক প্রশিক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং কৃষকের জন্য নির্ধারিত সময়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা সহজ হবে। এর ফলে দ্রুত সময়ে মাঠ পর্যায়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সহজ হবে।