বাংলাদেশে শীতকালে বাহারি রকমের শাক সবজির উৎপাদন হয় যা সারাবছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এসব শাক সবজির আবাদের কলাকৌশল অতি সাধারণ ও সহজ। যেকেউ চাইলেই এসব শাক সবজির সহজেই আবাদ করতে পারেন।
আমরা প্রথমে জেনে নিতে পারি যে শাক এবং সবজির মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত শাক বলা হয় পাতাজাতীয় সবজিকে এবং পাতাসহ ফল, কান্ড, শাখা প্রশাখাযুক্ত ফসলকে বলা হয় সবজি। মূল কথা হলো, সকল শাকই সবজি কিন্তু সকল সবজি শাক নয়। শীতকালীন যেসব শাক জন্মায় তার মধ্যে লাউশাক, লালশাক, মূলাশাক, পালংশাক ইত্যাদি খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ।
এছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাক জন্মায় যা অনেক পুষ্টিকর, তবে এসব শাক খুব একটা প্রচলিত না, যার মধ্যে রয়েছে বথুয়া শাক, ধনেপাতা শাক, ডাটা শাক, দেশি গোলআলু পাতা শাক, চালকুমড়া পাতা শাক, কচুপাতা শাক ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে লাউপাতা শাকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি যা শীতকালের শুরুতেই বাজারে পাওয়া যায়।
অনেক কৃষক লাউপাতা এখন শাক হিসেবে উৎপাদন শুরু করেছে যা শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বাজারে পাওয়া যায়।
এছাড়াও মূলার থেকে ইদানীং মূলাশাকের চাহিদা গ্রাহকদের মাঝে অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি শাকের বেশি চাহিদা থাকার কারনে এক শীতে একাধিকবার উৎপাদন করা হয়। শীতের শুরুতেই আবাদ করতে পারার কারনে যেমন ভোক্তারা খুব তাড়াতাড়ি এসব পুষ্টিকর শাক পেয়ে যাচ্ছে তেমনি কৃষকরাও অনেক লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, পৌষ ও মাঘ মাসকে শীতকাল ধরা হয়। প্রধানত এই দুই মাসেই বেশিরভাগ শাক সবজি জন্মে থাকে। তাছাড়াও ফসলী হিসেবে আশ্বিন, কার্ত্তিক, অগ্রাহায়ন, পৌষ, মাঘ এমনকি ফালগুন মাসকেও শীতকালীন ফসলের মৌসুমের ভিতরে ধরা হয়ে থাকে, যে সময় বাজারে প্রচুর শীতকালীন শাক সবজির লক্ষ্য করা যায়। কাজেই শীতকালীন শাক সবজির উৎপাদন নিয়ে আলোচনা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লাউশাক চাষ সম্পর্কে আলোচনাঃ
শাক আবাদের জন্য আগস্ট ও সেপ্টম্বর মাসের দিকে যখন বৃষ্টিপাত কম হয় তখন একটু উঁচু ধরনের জমি বেছে নিতে হবে। এছাড়াও গ্রামের বসতবাড়ির আঙিনায় এবং শহরে বাসাবাড়ির ছাদেও এসব শাকের আবাদ করা যাবে।
প্রথমে লাউ শাকের কথা বলতে গেলে দেখা যায়, কৃষি বিজ্ঞানীগণ লাউ পাতা শাক উৎপাদনের জন্য একাধিক জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা চাষের জন্য জমিতে কোন ধরনের চাষ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অপরদিকে মাটি ছাড়াও ঝুলন্ত টবেও লাউশাকের আবাদ করা যায়।
শাক চাষের জন্য লাউয়ের বীজগুলো ঘনঘন করে রোপন করতে হবে। ভালো শাক এবং দ্রুততর বৃদ্ধি পাবার জন্য বীজ রোপনের পূর্বে যে গর্তে রোপন করা হবে সেখানে এককেজি পরিমাণে শুকনা গোবর, একমুষ্টি পরিমানে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া প্রচুর পরিমানে ডগা ও পাতা বের হবে যা শাক চাষীর জন্য সুখকর খবর। খুব অল্পদিনের মধ্যেই ডগাসমেত পাতা শাক হিসেবে কর্তন করা যায়। সপ্তাহে ২-৩ বার শাক উত্তোলনের জন্য, প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি গাছের গোড়ায় প্রয়োজনীয় জৈব সার, রাসায়নিক সার এবং প্রয়োজনীয় সেচ সরবরাহ করতে হবে।
তাছাড়া লাউ শাক চাষের জন্য যে গাছ লাগানো হয়, সেখান থেকেও লাউপাতা শাক সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রতিটি লাউয়ের কুঁড়িতে যতগুলো মুকুল আসে তার সবগুলো পরাগায়ন না হওয়ায় অনেক ফল পঁচে নষ্ট হয়ে যায়, এর প্রধান কারন হচ্ছে লাউ একটি উভলিঙ্গিক ফসল। এছাড়া ডগা ও পাতার বেশি বেড়ে যাওয়া এবং গাছের বাড়-বাড়তি বেশি হলেও ফল ঝড়ে যেতে পারে। লাউয়ের ফল উৎপাদন বাড়াতে চাইলেও পাতা ও ডগা কেটে ছেটে দিতে হয়, যার মাধ্যমে অনেক শাক পাওয়া সম্ভব।
লতাজাতীয় শাক হবার কারনে লাউ যেভাবে আবাদ করা হয়, অন্যান্য শাকের উৎপাদন ঠিক অন্যরকম। লালশাক, পালংশাক কিংবা মূলাশাক আবাদের জন্য উঁচু জমির প্রয়োজন হয়। তবে লাউশাক ছাড়া মূলাশাক, লালশাক কিংবা পালংশাক আবাদ প্রায় একই প্রকৃতির, শুধুমাত্ত সেগুলোর জন্য জমি চাষ দিয়ে নিতে হয়। উঁচুমাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে জৈব ও রাসায়নিক সার পরিমাণ ও প্রয়োজনমত দিয়ে বীজ ছিটিয়ে বুনে দিয়ে সঠিক যত্নের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
শাক সবজির আগাম চাষের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বেশ সুযোগ রয়েছে। কাজেই প্রচুর শাক সবজি চাষের মাধ্যমে একদিকে আমাদের যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব অপরদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার ও সুযোগ রয়েছে।