নওগাঁর মান্দা উপজেলা মৈনম ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘ললিতপুর’। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি- ‘মডেল লাইভস্টক ভিলেজ’হিসেবে গ্রামটি স্বীকৃতি পেয়েছে।
গত এক বছর থেকে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) এবং কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) সমিতির মাধ্যমে গ্রামের মানুষরা তাদের গবাদিপশুগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পালন করছেন।
গ্রামের প্রাণিজাত পণ্যের দৈনিক উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন, বার্ষিক চাহিদা ও উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যমতে, গ্রামের ৯২টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৩২২ জন। যেখানে গরু ২৫৯টি, ছাগল ২৭৮টি, মুরগি ৮০০টি, হাঁস ২০০টি, কবুতর ৬০টি এবং ভেড়া আছে পাঁচটি ।
ললিতপুর গ্রামে প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ২০৮ লিটার, ডিম ৪৫৪টি এবং মাংস ৫৫ কেজি। গ্রামে আমিষ ও পুষ্টি চাহিদার পরিমাণ দুধ ৪৩ লিটার, ডিম ১৮৬টি ও মাংস ২৫ কেজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এগুলো।
এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং কবুতর আছে। অন্যান্য গ্রামের তুলনায় সবদিক থেকে গবাদিপশু বেশি থাকায় গ্রামটিকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে ফ্রিতে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘গাভী পালন প্রদশর্নী সমিতি’ নামের সমিতি করে ৩০ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অন্যরা পরামর্শ নিচ্ছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন গ্রামের সবাই।
গাভী পালন প্রদশর্নী সমিতির ক্যাশিয়ার সাগরী রানী বলেন, আগে গরু ও ছাগল পালন এবং রোগবালাই (খুরারোগ, পচামিনা, কৃমি) বিষয়ে তেমন কিছুই জানতাম না। এছাড়া ইচ্ছেমত খাবার দিতাম। কোনো ধরনের ভ্যাকসিন বা কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতাম না। পরির্চযাও ঠিকমতো করতে জানতাম না।
তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অনেক কিছু জানতে পেরেছি। কখন কি ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং কিভাবে পরিমাণ মতো খাবার দিতে হবে সেসব সম্পর্কে ধারণা হয়েছে। আগে গাভী কম দুধ দিত। কিন্তু এখন একটু বেশি দুধ দিচ্ছে।
সমিতির সদস্য বাঁধন বলেন, আমাদের পাঁচটি গরু ও চারটি ছাগল আছে। আগে পশু ডাক্তারকে চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য টাকা দিতে হত। কিন্তু এখন আমরা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ফ্রিতে চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছি।
শিক্ষিত যুবক সবুজ কুমার বলেন, আমাদের গ্রামকে মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘গাভি পালন প্রদশর্নী’ এর আওতায় ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গ্রামে আরো যারা বাসিন্দা আছেন তাদেরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে করে পশুপালন ও যত্নের দিক দিয়ে গ্রামটি আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
গাভি পালন প্রদশর্নী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র বলেন, অন্য গ্রামের তুলনায় পশুপালনের জন্য আমাদের গ্রামটি এগিয়ে। নিজেরও ৯টি গরু (চারটি গাভি, তিনটি বকনা ও দুইটি বলদ) আছে। আগে নিজেদের ইচ্ছেমত গরু-ছাগল পালন করতাম। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর যত্নের সঙ্গে পালন করছি।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সমিতিকে তিন লাখ ৮৭ হাজার টাকা দিয়েছে। যেখানে সমিতির ৩০ জন সদস্যের অগ্রাধিকার রয়েছে। এ টাকা দিয়ে আমরা তিনটি অটোরিকশা ও দুধের কন্টেনার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক সময় বাজারে দুধের দাম পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে অটোরিকশা করে শহরের বাজারে নিয়ে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
মান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমান্য চন্দ্র বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতর’ এর কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি গ্রামকে বেছে নিয়েছি। গত বছরের মার্চ মাস থেকে ললিতপুর গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে গবাদিপশু পালনে ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়া এবং পুষ্টিকর খাবারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি ইনোভেশন ফান্ড’ নামের একটি ফান্ড আছে। সমিতির সদস্যরা তারা তাদের উন্নয়নের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করবেন এখানে। এরপর তাদের সঞ্চয়ের ৩০ শতাংশ এবং কৃষি ইনোভেশন ফান্ড থেকে ৭০ শতাংশ টাকা দেয়া হবে। যা দিয়ে দুধ বাজারজাত করতে অটোগাড়ি, কন্টেনার বা ঘাসকাটার মেশিন কেনার জন্য টাকা দেয়া হবে।