এ বছর বর্ষা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়নি। এমনকি মাঠে সেচ দেবার জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই খালে-বিলে। সেচ পরিচালনার জন্য ফসলের মাঠে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। কিন্তু ভাইদের বিরোধে গভীর নলকূপ বন্ধ হয়ে আছে জয়পুরহাটে। জেলার আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কালাইকুড়ি গ্রামের মাঠের ঐ গভীর নলকূপটি এখনো চালু হয়নি।
এদিকে সেচের পানি না পেয়ে আশপাশের মাঠের আমন ধানখেত নষ্ট হতে পারে।
এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
এই গভীর নলকূপটির মালিকানা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে আপন দুই ভাই।
তারা হচ্ছেন নিজাম উদ্দিন ওরফে বুলু ও মামুনুর রশিদ ওরফে লালু।
তাদের মধ্যে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে গভীর নলকূপের ঘরে এখন তালা ঝুলছে।
বিরোধের বিষয়টি সমাধানের জন্য কৃষকেরা উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
তবে এক সপ্তাহ পার হলেও কৃষকেরা এখনো কোনো সুফল পাননি।
গত ১৭ আগস্ট দুই ভাই নিজাম ও মামুনুর নলকূপের ঘরে পাল্টাপাল্টি তালা লাগিয়ে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ৮০ দশকের শেষের দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপটি বসানো হয়।
জানা যায় নলকূপটির আওতায় প্রায় ১৮০ বিঘা জমি রয়েছে।
গভীর নলকূপের মালিক ছিলেন মামুনুর ও নিজামের বাড়ি।
বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই পালাক্রমে গভীর নলকূপটি পরিচালনা করে আসছিলেন।
শর্ত ছিল প্রত্যেকে দুই বছর করে পালাক্রমে সেটা পরিচালনা করবে।
এই হিসেবে এ বছর নলকূপ পরিচালনার কথা নিজামের।
কিন্তু মামুনুর এ বছর আবার নলকূপ চালু করতে যান।
যা নিয়ে তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে শুরু হয় বিরোধ।
এরপর নলকূপের ঘরে পাল্টাপাল্টিভাবে তালা মারেন দুই ভাই নিজাম ও মামুনুর।
যার দরূন বন্ধ হয়ে যায় সেচকাজ।
মাঠ গিয়ে ওই নলকূপের ঘরে একসঙ্গে দুটি তালা ঝুলতে দেখা যায়।
কিছু কিছু আমন ধানের খেতে সামান্য বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
কিন্তু বেশির ভাগ জমিতেই পানির দেখা মেলেনি।
কিছু কিছু খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যেতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী একজন কৃষক জানান তার দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানো হয়েছে।
কিন্তু সেচের জন্য পানি না পেয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
উপজেলা সেচ কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান।
কিন্তু এক সপ্তাহ পার হলেও সেচের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
অপর কৃষক জানান স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে প্রয়োজনে তৃতীয় কোনো পক্ষকে ওই নলকূপ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে।
দুই ভাইয়ের একজন নিজাম উদ্দিন জানান, এবছর নলকূপটি তার পরিচালনার কথা ছিল।
কিন্তু তার ছোট ভাই নলকূপটি একক মালিকানা দাবি করায় নলকূপের ঘরে তালা দিয়েছেন তিনি।
তবে মামুনুর রশিদ অন্য দাবি করেন।
তার দাবি, পৈতৃক সম্পত্তি দুই ভাইয়ের মাঝে ভাগ–বাঁটোয়ারা হয়ে গেছে।
সে হিসেবে গভীর নলকূপটি তাঁর ভাগে পড়েছে।
কিন্তু নলকূপ চালু করতে গেলে তাঁর বড় ভাই সেটার মালিকানা দাবি করছেন।
তাই তিনিও সেটিতে তালা দিয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেন গভীর নলকূপের সব কাগজপত্র তাঁর নিজের নামে।
এই বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম হাবিবুল হাসান এর সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বরাবর নলকূপটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করার জন্য বলেছেন।
একইসাথে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপককেও সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান।
তবে এখনো কোনো সমঝোতায় যাওয়া সম্ভব হয়নি।
ইউএনও আরও জানান এক ভাই আদালত থেকে ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এসেছেন।
সে কারণেও নলকূপ চালুর বিষয়ে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ইউপি কার্যালয়ে দুই ভাইকেই ডাকা হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
এখন নলকূপের ঘরের তালা খুলতে গেলে গন্ডগোল হবার সম্ভাবনা আছে।
তাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।