দেশে চাহিদার বিপরীতে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এরপরও গুজব ছড়িয়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এরূপ সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নায্য দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করলে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত আগামী ৩০ দিন তাদের অভিযান পরিচালনা করবে।
গত মঙ্গলবার সকালে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এ কথা জানান।
সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সারের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা পরিচালিত হয়।
এ সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব তথ্য জানান।
বিশ্ববাজারে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে শোষণ করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে
কৃষিমন্ত্রী জানান যে, বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক ভাবে সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতি টন ৩০০ ডলার মূল্যের সার এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬৪ ডলারে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট দাম বাড়িয়ে শোষণ করছে।
একই সাথে দেশে একদল সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা গুজব ছড়োচ্ছে।
সেই সাথে এলাকাভেদে বিচ্ছিন্নভাবে সারের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারা।
মন্ত্রী জানান যে এ বিষয়টি কঠোরভাবে তারা তদারক করছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়, দেশে ডিসেম্বর মাসে ইউরিয়া সারের চাহিদা ৩ লাখ ১ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন।
যার বিপরীতে বর্তমানে ৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন সার মজুত আছে।
এটি প্রয়োজনের চেয়ে ৫ লাখ টনেরও বেশি।
এছাড়াও টিএসপির ডিসেম্বর মাসে চাহিদা ১ লাখ ১৪ হাজার টন।
তার বিপরীতে ১ লাখ ৯২ হাজার টন সার মজুত।
ডিএপির চাহিদা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬১২ টন যার বিপরীতে মজুত ৫ লাখ ৯৬ হাজার টন।
অন্যদিকে এমওপির চাহিদা ১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৫ টন।
যার বিপরীতে ৩ লাখ ১২ হাজার টন মজুত রয়েছে।
দেশে সারের উৎপাদন, আমদানি ও মজুতে কোন সমস্যা নেই
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, সারের উৎপাদন, আমদানি ও মজুতে কোনো সমস্যা নেই।
এমনকি সারের কোনো রকম ঘাটতি নেই।
তাই কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য তার।
কিন্তু গুজব এবং অপপ্রচার ছড়ানোর মাধ্যমে সারের দাম বাড়িয়ে ফায়দা নেবার চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিকভাবেও বিরোধীরা এর ফায়দা নেবার সুযোগ নিতে পারে।
শিল্পমন্ত্রী আরও জানান যে, সার পরিস্থিতি নিয়ে খুব সতর্ক রয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিন সার পরিবহনে কিছু সমস্যা ছিল।
তবে তা কেটে গেছে।
কোনো ডিলার সারের দাম বেশি নিলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
গত এক মাস ধরে বোরো মৌসুমকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা সারের দাম বাড়িয়েছেন।
বিশেষ করে কৃষকেরা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন আলু ও রবি মৌসুমের সবজি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার কিনতে গিয়ে।
ঠাকুরগাঁও, রংপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল।
আর েএই অনিয়ম চলছিল ডিলার পর্যায় থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত।
এমনকি অভিযোগ উঠেছিল ডিলারদের বিরুদ্ধে বেশি দামে সার বিক্রি করে রসিদ না দেওয়ায়।