সাতক্ষীরার পাখিমারা বিলের জোয়ারাধার বন্ধ পড়ে আছে গত দেড় বছর ধরে। যার কারণে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প বন্ধ হতে চলেছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরনের টাকা হাতে পাননি পাখিমারা বিলের জমির মালিকেরা।
কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে।
এই প্রকল্পের প্রায় ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অথচ এর কাজের কোন গতিই নেই।
এদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে জমির বেশির ভাগ মালিক তাঁদের জমি দখলে নিয়েছেন।
সেখানে চাষাবাদ ও মাছ চাষ শুরু করায় এখন এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জেলার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে।
কিন্তু টিআরএম বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতিই দেখছেন না তিনি।
২০২০ সালের জলোচ্ছ্বাসে ও উচ্চ জোয়ারের ফলে পাখিমারা বিলের গ্রাম রক্ষা বাঁধ প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রকল্পের স্বার্থে বাঁধ সংস্কার করার জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে টিআরএম বন্ধ রাখা হয়।
কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি জমির মালিকেরা।
তাই তারা গ্রাম রক্ষা বাঁধ আর মেরামত করতে দেননি।
ফলে আর চালু করা যায়নি টিআরএম প্রকল্প।
বালিয়া গ্রামের৷ কয়েকজন কৃষক টিআরএম এলাকায় তাঁদের আট বিঘা করে জমির কথা বলেন।
২০১১ ও ২০১২ সালের ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও ২০১৩ সাল থেকে তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পাচ্ছেন না।
একই অবস্থা ওই বিলে জমি থাকা প্রায় দুই হাজার কৃষকের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কপোতাক্ষা নদ রক্ষার দাবি জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।
এর প্রকল্প ব্যয় ছিল প্রায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় এবং ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হয়।
এতে ৯০ কিলোমিটার নদী খনন করা হয়।
সেই সাথে তালা উপজেলায় অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করা হয়।
এতে কপোতাক্ষ নদের অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়ে ১৫ লাখ মানুষ উপকৃত হন।
প্রকল্পের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে এর দ্বিতীয় পর্যায় চালু হয়।
যার জন্য ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কৃষকদের দুই বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
কিন্তু এরপর থেকে কৃষকেরা আর ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।
দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ১৫৫৬ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ বছরে ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
কিন্তু তবুও কৃষকরা এখনো তা পাননি।
যার ফলে জমির মালিক কৃষকেরা খুবই আর্থিক সংকটে পড়েন।
আর তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা দখল নিয়ে চাষাবাদ ও মাছ চাষ শুরু করেছেন।
এবং এর ফলেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা অংশে দ্বিতীয় পর্যায়ে নদী খনন প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন টিআরএম এলাকার জমি থাকা কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে।
ইতিমধ্যেই পর্যায়ক্রমে টাকা দেবার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।
এবং এতে কৃষকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।