Saturday, 21 December, 2024

সর্বাধিক পঠিত

নারিকেল গাছের ফলন বৃদ্ধির উপায়


নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল। নারিকেলের ইংরেজি নাম Coconut। নারিকেলের বহুবিধ ব্যবহারের জন্য নারিকেল গাছকে কল্পবৃক্ষ বা স্বর্গীয় বৃক্ষ বলা হয়। ঔষধি গুণসম্পন্ন পানীয় হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি নারিকেল দিয়ে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয় যেমন- পিঠা, মোয়া ইত্যাদি।

নারিকেল গাছের সঠিক ভাবে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা না করলে নারিকেল ঝরে পড়ে। নারিকেল ছোট হয়। পানি কম থাকা বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা:

আরো পড়ুন
কোয়েল পাখি (quail birds) পালন পদ্ধতি

কোয়েল পাখি পালন বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ এটি অল্প জায়গায় এবং কম খরচে করা যায়। নিচে কোয়েল পাখি Read more

কিভাবে বাসায় বাজরিগার (Budgerigar Bird) পাখির যত্ন নিবেন?

বাজরিগার পাখি পালন করার জন্য সঠিক পরিচর্যা, সুষম খাবার, ও একটি উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। বাজরিগার পাখি বাসায় পালন Read more

নারিকেল গাছে সার ও পানি সেচ, নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিকমত হলে গাছের বাড়-বাড়ন্ত খুব বেশী বৃদ্ধি পায়। অন্য খাদ্যের তুলনায় এ গাছে পটাশ জাতীয় খাবারের চাহিদা তুলনামূলক বেশী।

সাধারণতঃ সুপারিশকৃত সার বছরে দু’বার (বর্ষার আগে ও পরে) প্রয়োগ করার প্রচলন আছে।

ক) নারিকেল গাছের গোড়ায় মাটিতে পানি ও খাবার কম থাকলে কচি ডাব ঝরে পড়ে।

খ) পটাশিয়ামের অভাবে কচি ডাব বেশি ঝরে। এক্ষেত্রে মাটিতে পটাশিয়াম ও নাইট্রোজেন জাতীয় সার ব্যবহার করতে হবে।

গ) নারিকেল গাছের গোড়ায় চারদিকে ১.৮ মিটার দূরে বৃত্তাকার গর্ত করে ইউরিয়া ৪ কেজি, এমওপি ৬ কেজি, টিএসপি ১ কেজি এবং সামান্য লবণ দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন লবণাক্ত এলাকায় লবণ দেয়া উচিৎ না।

চারা রোপণের ৩ মাস পর লাগানো চারার গোড়া থেকে ২০ সে.মি দুরেঃ ২০ সে.মি চওড়া ও ১০ সে.মি গভীর করে যে সব সার প্রয়োগ করতে হবে তা হলোঃ

পঁচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার: ১০ কেজি, ইউরিয়া: ১২৫ গ্রাম, টি এস পি : ১০০ গ্রাম এবং এম ও পি সার : ২৫০ গ্রাম। এ সারগুলো ৩ মাসের ব্যবধানে আরও দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। তবে পরের প্রতিবার গাছের গোড়া থেকে কিছু দুরে (৫-৭) সে.মি গাছের গোড়ার চারিদিকে নালা তৈরী করে একই ভাবে প্রয়োগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবার সার প্রয়োগ শেষে ২ বালতি পানি দিয়ে গোড়া ভাল ভাবে ভেজাতে হবে। খাটো গাছের নারিকেল সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ, পানি সেচ, পানি নিকাশ ও পরিচর্যা গ্রহন করলে চারা রোপণের ৩-৪ বছর থেকেই ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করবে। চতুর্থ বছরে জন্য যে সার সুপারিশ করা গেল তা পরবর্তী বছরগুলোতে প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।

চারা রোপণের পর থেকে চার বছর পর্যন্ত বছর বছরে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বোরন ৬ মাসের ব্যবধানে বছরে দু’বার প্রয়োগ যোগ্য।

নারিকেল গাছের পরিচর্যাঃ

ক) নারিকেল গাছের কিছু নিয়মিত পরিচর্যা করলে গাছের পুষ্টি উপাদানে ভারসাম্য আসে, পোকা ও রোগবালাই কম হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়।

খ) এর মধ্যে আছে নিয়মিত নারিকেল গাছ বাছাই বা গাছ ঝাড়া, সুষম সার ও সার ও সেচ প্রয়োগ, ইঁদুর দমন এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা।

গ) ঝুনা নারিকেল বা ডাব সংগ্রহের সময় গাছের মাথা পরিষ্কার করে দেয়া ভালো। সাথে সাথে মরা ও হলুদ পাতা ফেলে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ থেকে পরিচর্যা

ক) নারিকেল গাছের ও ফলের ক্ষতিকর বালাই হলো পোকামাকড়, রোগবালাই ও ইঁদুর। পোকামাকড়ের মধ্যে আছে প্রধানত গণ্ডার পোকা, লাল কেড়ি পোকা ও উইপোকা।

খ) গণ্ডার পোকা ও লাল কেড়ি পোকা গাছের মাথায় আক্রমণ করে কচি অংশে ছিদ্র করে ভেতরের নরম অংশ খেতে থাকে। ফল গাছের মাথায় অসংখ্য ছিদ্র দেখা যায়।

গ) আক্রমণ বেশি হলে গাছের মাথা শুকিয়ে যায় ও গাছ মারা যায়। লাল কেড়ি পোকার ছিদ্রের মুখে বাদামী চটচটে গদের আঠার মতো রস গড়িয়ে পড়ে ও চিবানো কাঠের গুড়া দেখা যায়।

ঘ) কাণ্ডের গায়ে কান পাতলে কড় কড় শব্দ শোনা যায়। সামান্য বাতাসে গাছ ভেঙে পড়ে। বছরের যে কোন সময় এসব পোকা আক্রমণ করতে পারে।

নারিকেল গাছের পরিচর্যা

ঙ) তবে উইপোকা চারার জন্য লাগানো নারিকেল ও কচি গাছকে বেশি আক্রমণ করে। অনেক সময় নারিকেল গাছের কাণ্ডে ঢিবি তৈরি করে কাণ্ডের যে অংশে ঢিবি করে সেই অংশ দুর্বল হয়ে গাছ ভেঙ্গে যায়।

নারিকেল বাগান বিশেষ করে গাছের গোড়ার চারধার সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। প্রথম ২ বছর গাছের গোড়া থেকে ৬০-৭০ সে.মিঃ দুর পর্যন্ত বৃত্তাকারে চারিদিকের অংশে কচুরী পানা শুকিয়ে ছোট করে কেটে ৮-১০ সে.মিঃ পুরু করে মালচিং দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছের গোড়া ঠান্ডা থাকবে, আগাছা জন্মাবে না, মাটির রস সংরক্ষিত থাকবে এবং পরবর্তীতে এগুলো পঁচে জৈব সার হিসাবে কাজ করবে। তবে এভাবে মালচিং দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা একেবারে গাছের কান্ডকে স্পর্শ না করে, গাছের গোড়ার অংশ কমপক্ষে ৮-১০ সে.মিঃ ফাঁকা রাখতে হবে।

বিকল্প হিসাবে চিনাবাদামের খোসা, ধানের তুষ, আখের ছোবড়া, কাঠের গুড়া, নারিকেলের ছোবড়া, গাছের শুকনা পাতা, সমুদ্রের শ্যাওলা, বিভিন্ন খড়-কুটা, লতা-পাতা মালচিং হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।

মালচিং অবস্থায় অনেক সময় উই পোকাসহ অন্যান্য পোকা মালচিং ব্যবস্থাকে আবাসন হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।

নারিকেল ঝরে পড়ার কারন

খরার সময় জমিতে পানির পরিমাণ কমে গেলে বা খরার পর ভারী বৃষ্টিপাত হলে গাছে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে ছোট ছোট নারকেলগুলো ঝরে পড়ে।

সেজন্য খরার সময় নারকেল গাছের গোঁড়ায় ১৫-২০ দিন পর পানি দেয়ার প্রয়োজন। জমিতে পানির অভাব হলে বা প্রতিকূল অবস্থায় ফল ও ডাটার গোঁড়ায় এবসাইজিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ফল ঝরে পড়ে।

এমন অবস্থায় ৬০ পিপিএম শক্তির ২-৪-ডি মিশ্রণ ফুলের ডাটায় ৭ দিন পর পর ৪ বার প্রয়োগ করলে ঝরে পড়া বন্ধ হয়।
প্লেনোফিক্স জাতীয় হরমোনের ১০ পিপিএম মিশ্রণ নারকেলের ফুলে এবং পরে ২০ পিপিএম নারকেলের ডাটায় প্রয়োগ করলেও নারকেল ঝরে পড়া বন্ধ হয়। রোগ ও পোকার আক্রমণ না থাকা গাছের নারকেল হরমোনের জন্য সাধারণত ঝরে পড়ে।

0 comments on “নারিকেল গাছের ফলন বৃদ্ধির উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *