বার্ড ফ্লুর (অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস) সংক্রমণ রোধে ভারত থেকে সব ধরনের হাঁস-মুরগি, ডিম ও বাচ্চা আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সীমান্তবর্তী জেলা প্রশাসনকে সতর্কতামূলক চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে চোরাপথে এসব প্রাণী যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কেবল সতর্কতামূলকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও বাংলাদেশে এখনও কোন জেলায় বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ দেখা যায়নি। এখানে খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভারতে যেখানে রোগটি শনাক্ত হয়েছে, তা বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে। আমরা আমাদের মাঠকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। কোনো প্রকার উপসর্গ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা তো আছেই। তাই ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন আমদানি নিষিদ্ধের বিষয়ে মঙ্গলবার পৃথক তিনটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘ভারত থেকে কোনোভাবেই যাতে মুরগির বাচ্চা, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিম আমদানি না হয় সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রোগের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সীমান্ত পথে বৈধ ও অবৈধভাবে মুরগির বাচ্চা, প্যারেন্টস্টক, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সমুদ্র, নৌ এবং স্থলবন্দর দিয়ে মুরগির বাচ্চা, প্যারেন্টস্টক, হাঁস-মুরগি, পাখি ও ডিমের অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্র্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘
সপ্তাহ কয়েক আগে ভারতে বার্ড ফ্লু দেখা যায়। বৃহস্পতিবারে পাওয়া সর্বশেষ খবরে বলা হচ্ছে যে দেশটির অন্তত ১০টি রাজ্যে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। ভারতের কিছু রাজ্যে এ কারণে পোল্ট্রি খামারে হাঁস-মুরগি নিধন শুরু করেছে – এরই মধ্যে হাজার হাজার হাঁস-মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সে প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে পর্যন্ত ভারত থেকে হাঁস, মুরগি ও পাখি আমদানির উপর আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
মন্ত্রণালয় থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন হাঁস-মুরগির ছোটখাট অসুস্থতার খবর পাওয়া গেলেও সাথে সাথে সেগুলোর পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি খামারগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।