Saturday, 17 May, 2025

সর্বাধিক পঠিত

টাঙ্গুয়ার হাওরে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমানে মাছ


মাদার ফিশারিজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত। প্রতি বছর উৎপাদন হয় লাখ লাখ টন মাছ। তবে অপরিকল্পিত ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলের কারণে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, এক সময় টাঙ্গুয়ার হাওরের স্বচ্ছ পানির ওপর দিয়ে নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় পানির নিচের নলখাগড়া আর বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ স্পষ্ট দেখা যেত। যার ফাঁকে ফাঁকে নৌকার গতির সঙ্গে সাঁতরে পাল্লা দিতো জানা-অজানা নানা ধরনের ছোট-বড় মাছ। এখন মাছের সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্তির পথে জলজ উদ্ভিদ। সেইসঙ্গে হাওরে নতুন যোগ হয়েছে পর্যটকবাহী নৌকার মহাযজ্ঞ। এসব বড় বড় নৌকার অবাধ চলাচল আর ঢেউয়ে হাওর হারাচ্ছে তার ঐশ্বর্য। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে মাছের প্রজনন।

গবেষণা অনুযায়ী শুধু মাছ নয়, এই হাওরে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২শর বেশি প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপ এবং ১০০০ প্রজাতির বেশি অমেরুদন্ডী প্রাণীর আবাস ছিল। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওরে এখন শুধু পানি আছে। হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ বাঁচিয়ে রাখতে আগামী বছর থেকে পর্যটকবাহী নৌকার নির্দিষ্ট জোন ও নিয়ম বেঁধে দিয়ে হাওরের মাছ ও পাখি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

আরো পড়ুন
শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিক আনারস চাষে সাফল্য: সম্ভাবনায় ভরপুর পাহাড়ি কৃষি

শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া বাণিজ্যিক আনারস চাষ এখন রূপ নিচ্ছে স্থায়ী ও লাভজনক কৃষি উদ্যোগে। পাহাড়ি জমিতে Read more

ইয়াং অ্যাগ্রিকালচার ক্যাডার অফিসার্স ফোরাম’-এর আত্মপ্রকাশ, ৪১ সদস্যদের কমিটি

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) কৃষি ক্যাডারের নবম গ্রেডে কর্মরত তরুণ কর্মকর্তাদের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে নতুন সংগঠন—‘ইয়াং অ্যাগ্রিকালচার ক্যাডার অফিসার্স ফোরাম’। Read more

জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ একটার সঙ্গে আরেকটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই হাওরের পরিবেশ ঠিক না থাকলে থাকবে না মাছ ও গাছ। মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। মাছ, গাছ আর পাখি না থাকলে হারিয়ে যাবে টাঙ্গুয়ার হাওরের হাঁক-ডাক। আর এসব হারিয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে অপার সম্ভাবনাময়ী টাঙ্গুয়ায় পর্যটন খাত। তাই টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হাওরের প্রত্যেকটি উপাদানকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন হাওর পাড়ের মানুষরা।

হাওর পাড়ের জেলে হাবেল মিয়া বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে আগে নৌকা চালিয়ে গেলেই পানির নিচে মাছ দেখা যেত। মাছ নৌকায় লাফিয়ে উঠত। কিন্তু এখন জাল দিয়েও মাছ পাওয়া যায় না।
মো. সালমান হোসেন নামে একজন বলেন, হাওরে এখন শুধু পানি আর পানি। কোনো মাছ নেই। পর্যটকের নৌকা আর ইঞ্জিনের শব্দে মাছ থাকছে না।

সংস্কৃতিকর্মী রবিউল ইসলাম পুলক বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকার একটি টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানে আমি আগে এসেছিলাম, এখনও আসছি। এখন আর আগের মতো পরিবেশ নেই। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক না রাখলে পর্যটক আসবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন হাওরের পরিবেশ রক্ষায় সুদৃষ্টি দেন।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বছর পর্যটন বিকাশের জন্য আমরা সব কিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। তবে আগামী বছর থেকে পর্যটকবাহী নৌকা চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা ঠিক করে লাল পতাকা দিয়ে জোন তৈরি করে দেওয়া হবে। যেখানে মাছের অভয়াশ্রম, সেখানে কোনো ইঞ্জিনচালিত নৌকা যেতে দেবো না। এ সম্পর্কে নৌকা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তাহলে না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গুয়ার হাওর সরকারি সম্পদ, আমার আপনার সম্পদ। এ সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।

0 comments on “টাঙ্গুয়ার হাওরে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমানে মাছ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ