ঘাটতি নয় বরং ৫-৬ দফা বন্যা, কভিড-১৯, আম্ফান, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের পরও অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা আগামী জুন পর্যন্ত পূরণ করে কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ওই দাবি করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।
ব্রি’র সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষণা দলের প্রধান কৃষিবিদ মো. আব্দুর রউফ সরকার জানান, গবেষণায় দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চল থেকে ১৮০০ কৃষক, ৫৬জন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ১১২জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে এ বছর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বাদে আমন ধানের অর্জিত এলাকা ছিল ৫৭.৮৫ লক্ষ হেক্টর।
তিনি আরো বলেন, উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের বন্যা প্রবণ এলাকায় আমন ধানের আবাদ হয়েছিল যথাক্রমে বন্যা অনাক্রান্ত এলাকার ২১.৫ লাখ হেক্টর, অল্প বন্যা আক্রান্ত এলাকার ১৬.০ লাখ হেক্টর, মধ্যম মানের বন্যা আক্রান্ত এলাকার ১৪.৩ লাখ হেক্টর এবং অতিবন্যা আক্রান্ত এলাকার ৬.০ লাখ হেক্টর জমিতে। কয়েক দফা বন্যা, কভিড-১৯, আম্ফান, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে ৩৫টি জেলার আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গত বছরের তুলনায় দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলের মধ্যে এ বছর ১০টি কৃষি অঞ্চলে আমন ধানের ফলন বিভিন্ন হারে কমেছে। অপরদিকে বাকি ৪ অঞ্চল গুলোর মধ্যে দিনাজপুরে ১১.১ শতাংশ, খুলনায় ৭.১ শতাংশ, চট্রগ্রামে ১.৩ শতাংশ, এবং যশোরে ৩.৫ শতাংশ ফলনবৃদ্ধি পায়। তবে ১৫.৫০ মিলিয়ন টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ১০ শতাংশ কমে আমন উৎপাদন দাঁড়ায় ১৩.৯৪ মিলিয়ন টন।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, চালের হিসাবে এ বছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদন হয়েছে ৩৭.৪২ মিলিয়ন টন। এ বছর হিউম্যান ও নন-হিউম্যান কনসাম্পশনসহ বাৎসরিক মোট চাহিদা ছিল ৩৪.৪২ মিলিয়ন টন। চাহিদা ও উৎপাদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ডিসেম্বর ২০২০ হতে জুন ২০২১ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা মিটিয়ে কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্ধৃত্ত থেকে যাচ্ছে। সুতরাং উৎপাদন কম হয়েছে বলে ঘাটতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।
আভ্যন্তরীণ মজুদ নিয়ে নেতিবাচক খবরে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারি পদক্ষেপের প্রতি আস্থা রাখার অনুরোধ এবং বাজারে চালের দামে যে তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বছর ফলন বৃদ্ধির পেছনে বন্যা পরবর্তী সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ এবং ধানের বাড়তি দাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আগামী বোরো মৌসুমে বন্যা আক্রান্ত এলাকা গুলোতে প্রয়োজনীয় বীজ, চারা ও সারসহ সকল উপকরণ যথাসময়ে সরবরাহ করা গেলে ফলন আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও মত প্রকাশ করেন ড. মো. শাহজাহান কবীর।