দেশের বৃহত্তম বিল এর নাম চলনবিল। বিলটি রাজশাহী, নটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এটির অবস্থান। তবে পলি জমে জমে চলন বিল এখন আগের মতো আর নেই। এখন চলনবিলে সরিষার চাষ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা জমিতে। সেখান থেকে আহরিত হচ্ছে মধু। চলনবিলে সরিষার চাষ হতে প্রাপ্ত মধুর পরিমান প্রায় ২০০০ হাজার মেট্রিক টন হবে বলে আশা করছেন মধু সংগ্রহকারীরা।
মধুর বাজার মূল্য ৪০ কোটি টাকা
প্রতি কেজি মধু প্রায় ২০০ টাকা দরে বিক্রি হলে এর বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
চলনবিলে মধু সংগ্রহে প্রায় এক হাজার মৌচাষি এসেছেন।
আর তাদের সাথে আরো তিন-চার হাজার জন শ্রমিক-কর্মচারি রয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায় চলনবিলে মধু সংগ্রহ করায় আর্থিকভাবে লাভবান হবার পাশাপাশি পরাগায়নও ভালো হচ্ছে।
ব্যবসায়ি সংগঠনের নেতাদের মতে, মধু বিক্রির বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে তারা আরও ভালো দাম পাবেন।
বছরের অগ্রহায়ণ-পৌষ-মাঘ মাসজুড়ে চলনবিলের মাঠগুলো সরিষার ফুলে ফুলে ভরে যায়।
প্রায় এক হাজার খামারি চলনবিল এলাকায় মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন।
এক সময়ের মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিল এখন যেন ‘মধু’র বিলে পরিণত হয়েছে।
মৌচাষি সমিতি সূত্র জানায়, এবারও কুষ্টিয়া, চাপাই নবাবগঞ্জ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৬৯ জন মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য এসেছেন।
তারা চলনবিলের সরিষা ক্ষেতের পাশে ৮৮ হাজার ৪৩২ মৌ বাক্স বসিয়েছেন।
আবার হিসেবের বাইরেও আরও কিছু মৌ বাক্স স্থাপতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রায় ৪০ কোটি টাকার মধু চলতি মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে সংগ্রহ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলের ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আশা করছে ফলনও ভালো হবে বলে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএ মাসুম বিল্লাহ।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগও মধু সংগ্রহের বাক্স প্রদান করেছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে প্রায় ২০০০ মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক।
তিনি জানান, এ উপজেলায় এবার বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় কৃষকেরা আগাম ফসল সরিষার চাষ করেছেন।
একই জমিতে পরবর্তীতে ইরি-বোরোর আবাদ হবে।
এবারও মধুচাষিরা ভাল দাম পাবেন
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন চৌধুরী।
তিনি বলেন, সরিষা চাষ ও মধু আহরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
চলনবিলে সরিষা আবাদের সময় শত শত টন মধু পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু আহরণকারীরা সরিষা ফুলের মৌসুমে চলনবিলে আসেন মধু সংগ্রহের জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) পাবনার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান।
তিনি জানান, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলা রয়েছে চলনবিল ঘিরে।
সরিষা আবাদ এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, সরিষা ক্ষেতে মধুর বাক্স স্থাপনে মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে।
যাতে সরিষার ফলন বেড়ে গিয়ে চাষি ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হয়।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, গত বছর খামারিরা মধুর ভালো দাম পেয়েছেন।
এবারও ভালো দাম পেয়ে চাষিরা লাভবান হবেন।